Sunday, January 12, 2020







গল্পঃ
ময়না  তদন্ত
স্বাধীন চক্রবর্তী 

মা বাবার মাত্র অতি আদরের মেয়ে ছিলাম আমি ।অন্য দশটি মেয়ের মতোই বন্ধুদের সাথে কলেজ যাওয়া, আড্ডা মারা, ঘুড়তে যাওয়া এই সব করে আমার দিন বেশ আনন্দে কেটে যাচ্ছিল আমার বই পড়া ও এডবেঞ্চার প্রিয় ছিলাম। মা-বাবার এক মাত্র মেয়ে বলেই আমার আবদারের সীমা ছিলনা।
আর আমার সব আবদার ও পূর্ন করতো মা বাবা।
আমি লেখা-পড়া করছি সাথে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতেও জব করছিলাম। একসময় কোম্পানি থেকে বলা হল এই বছর পিকনিক হবে বান্দরবানে। যথারীতি আমরা গাড়ীতে উঠি বান্দবানের উদ্দেশ্য।আমি কখনো বান্দরবন যাই নি। আর মনে মনে পাহাড় দেখা পাহাড়ে ঘুড়ার এক এডভেঞ্চার এডভেঞ্চার ভাব চলে আসল। ইচ্ছে পাখিনা যেনো পাখা মেয়ে দিয়েছে দূর পাহাড়ের গায়ে। সেই দিনটি ছিল শুক্রবার অফিসের সকল কর্মচারী সকাল ৭ টায় এসে হাজির হলেন। এবং ৮ টায় গাড়ি ছেড়ে দিলেন। পাহাড়ের আকা-বাঁকা, উঁচু-নিচু পথ ধরে গাড়ি ছুটে চলেছে বান্দরবান এর দিকে। আমি গাড়ির জানালা দিয়ে পাহাড় আর সবুজের সমারোহ দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল যেনো কোন এক রূপের দেশে এসে গেছি। এই সব দেখতে দেখতে হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো, আমাদের ড্রাইভার বললেন গাড়ি মেঘলায় এসে গেছে। মেঘলায় ২০ মিনিট থাকবে তারপর সবাই যেনো আবার গাড়িতে চলে আসে।সবাই গাড়ী থেকে নেমে কেউ ছবি নিচ্ছল কেউ ঘুড়ছিল। আমি আর জয়াদি সেল্ফি নিচ্ছলাম ।আমাদের জয়াদি সেল্ফি পাগল মানুষ, তিনি সারা দিন সেল্ফি তুলেই কাটাতে পারেন। ও বলা হয়নি জয়া দি হচ্ছেন আমার বস। আমরা সবাই বেশ কিছুক্ষণ সেখানে ঘুরা ঘুরি করার পর আমরা গাড়ীতে উঠি। গাড়ী এগিয়ে চলেছে আকা-বাকা উঁচু-নিচু পথ ধরে। গাড়ী যখন নিচের দিকে নামতে থাকে তখন মনে হয় এই বুজি গাড়ী উলঠে গেলো। এই উঁচু নিচু করতে করতে গাড়ী এগিয়ে চলেছে। একটা তিন রাস্তার মাথায় এসে যখন গাড়ি উপর দিকে উঠতে শুরু করল তখন হৃদয় ভাই বললো আমরা নীলাচল যাচ্ছি। আমাদের হৃদয় ভাই এর বাড়ি এখানেই তাই তিনি সব কিছুই চিনেন আর জানেন। একসময় আমাদের গাড়ী নীলাচল এসে দাড়ায়। আমি গাড়ি থেকে নেমে চার দিকে দেখতে লাগলাম অসাধারণ সুন্দর একটা যায়গা। চারপাশের পাহাড় গুলে দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মাঝখানে ছোট ছোট গ্রাম। আমার তখন মনে হচ্ছিল যেনো দুইটা পাখা মেলে উড়ে উড়ে বেড়ায় আর ঘুরে ঘুরে দেখি। কখন যে রিয়াদ ভাই আমার পাশে এসে দাড়াঁলো বুঝতেই পারিনি। রিয়াদ ভাই বললো ওই দেখুন স্বর্ণ মন্দির দেখা যায়। আর ওই দিকে দেখুন রামযাদি। বহু দূর থেকে এই দুইটি মন্দির এর চূড়া দেখা যাচ্ছে, খুবই সুন্দর এই দুইটা মন্দির। দুপুরে এখানেই লাঞ্চ করে গাড়ি স্বর্ন মন্দির যাবে। আমি মন্দির, পাহাড় গ্রাম দেখছিলাম। আর মাঝে মাঝে সেল্ফি নিচ্ছিলাম। আমাদের কলিক তোহিদ এসে বলল এখানে আর কতখন দাঁড়িয়ে থাকবেন? চলুন ঘুরে দেখা যাক যদিও এই ছেলেটাকে আমি তেমন পাছন্দ করিনা কিন্তু সেটা বুজতেও দেয়না। সবাই যে যার মতো ঘুরছে ছবি তুলছে। আমাদের বিবেক ভাই সবার থেকে আলাদা সে ঘুরা-ঘুরি থেকে থেকে ছবি তোলাতে বেশি আনন্দ পাই বলে মনে হয়। আমরা সবাইকে তিনি বিভিন্ন ভাবে ছবি তুলে দিচ্ছেন। খুব সাদা সিধে মানুষ আমার কলিগ বিবেক। আমরা আর রাতুল কিছুক্ষণ সেখানে একটা ব্যঞ্চিতে বসি। হটাৎ হ্রদয় ভাই বলেন রিয়া চলো আমরা নিচের দিকে যাই ওখানে খুব সুন্দর। আমি বললাম চলুন তাহলে সবাইকে নিয়ে যায়। একটু ঘুড়ে দেখাও হবে আর সাথে এডভেঞ্চার ও হবে। হ্রদয় ভাই বলেন সবাইকে নিয়ে গেলে এডভেঞ্চারের মজা কই। আমিও ভাবলাম তাই তো সবাই গেলে মজা কই? তায় আমি হ্রদয় ভাই আর তোহিদ হাটা ধরলাম। একটু নামার পর পাহাড়ের মাঝখানে রাস্তা আর নিরবতা দেখে একটু ভড়কে গেলেও সেটা প্রকাশ করিনি। আমাদের কে দেখে বিবেক ছুটে এসে বলল আমাকে ফেলে যাচ্ছো কোথায়? অগত্য তাকেও সঙ্গে নেওয়া হলো। কিছু দুর যাওয়ার পর দেখি পাহাড় আর পাহাড়। ভয়ানক নিরবতায় যেনো একটা মায়া কাজ করছে। বিবেগ ভাই ছবি তুলেই যাচ্ছে। হ্রদয় ভাই আর তোহিদ দুরে দাড়িয়ে কি সব বলছে। আমিও ভয় আর আনন্দ নিয়ে ছবি তুলছি আর প্রকৃতির সুন্দর্য উপভোগ করছি। হঠাৎ তোহিদ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি প্রথমে হতবাক হয়ে গেলাম। কিন্তু পরক্ষণে বুজতে পারলাম আমার সাথে কি ঘটতে চলেছে। তাই প্রান পনে চিৎকার করতে গিয়েও পারলাম না। হ্রদয় আমার মুখচেপে ধরেছে। তারপর আমার উপর শুরু করল অমানবিক অত্যাচার। বিবেক এই ঘটায় প্রথমে বিব্রত হলেও পরে সেও পশু হয়ে যায়। আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। তাদের পাশবিক নির্যাতন শেষ হওয়ার পরে আমার শ্বাস রোদ করে দেওয়া হলো। আমি দেহ থেকে বেড়িয়ে গেলাম। আমি সব দেখতে শুনতে পাচ্ছি কিন্তু কিছু বলতে পারছিনা। তারা আমার দেহটাকে ওখানেই ফেলে চলে যাই। আমি আমার দেহের পাশে বসে আছি আর কাদঁছি, চিৎকার করছি কিন্তু আমার আওয়াজ কেউ শুনছেনা।এই বান্দরবন আর এডভেঞ্চার আমার সুন্দর জীবনের ইতি টেনে দিলেন। এই ভাবে ৫দিন কেটে গেলো আমার দেহ কেউ খুজে পেলোনা। ৬ দিনের মাথায় এক কাটুরে আমার দেহ খুজে পাই। পুলিশ আমার দেহ নিয়ে যাও পোস্টমর্টেম করার জন্য। আমার হত্যার সন্দেহে বিবেগ,তোহিদ,আর হ্রদয়, সহ বেশ কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু উপযুক্ত প্রমানের জন্য আমার পোস্টমর্টেম রিপোট প্রয়োজন। আমার দেহটাকে অন্ধকার একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। ভয়ানক দেখতে এক ডোম আমার দেহটা কে খন্ড বিখন্ড করছে। আমার চোখের সামনেই ডোমটা আমার পেট থেকে নাড়িভুড়ি সব বেড় করছে কাটছে, সে এক ভয়ানক দৃশ্য যেটা বলে বুঝানো যাবে না।আমার পোস্টমর্টেম এর রিপোর্ট তৈরি করতে একজন ডাক্তার এসেছিলেন আর তিনি তেমন কোন টেষ্ট না করেই রিপোট দিলেন এইটা একটা এক্সিডেন্ট। আমার বডিতে ধর্ষনের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়ায় শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে আর এই রিপোর্ট পেয়ে অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে গেলো। না যানি আমার মতো আরো কত অসহায় নারী ন্যযবিচার পাচ্ছেনা। টাকার তৈরির মিত্যা ভুয়া বা নকল রিপোর্ট এর কাছে হেরে যাচ্ছে প্রতিবার প্রতিক্ষণ। আর সেই রিপোর্ট এর সহায়তায় নরপিশাচের দল বুক ফুলিয়ে ঘুড়ে বেড়ায় আমাদের এই সমাজের মাঝে আর আমাদের থাকতে হচ্ছে মানব সমাজের বাইরে। ধর্ষনের পরে মারা গেলে তো বেচেঁ গেলো। আর মারা না গেলে অই মেয়েটাকেই কটু কথার তিক্ত কুঠারের আঘাতে মৃত্যু দেয় প্রতিক্ষণ এই মানব সমাজ। আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ষক নরপিশাচ গুলো নিরাপরাধ আর মহা অপরাধী সেই ধর্ষিতা নারী। 



কবি পরিচিয়:-
নাম:- কাঞ্চন চক্রবর্তী (স্বাধীন)
পিতা:- মিলন চক্রবর্তী
মাতা :- তাপসী চক্রবর্তী
জন্মস্থান:- লোহাগাড়া,চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
মো:-০১৬২৬৭৪৮৮৪৯

No comments:

Post a Comment

দিনাজপুর জেলার ইতিহাস অনুসন্ধান দ্বিতীয় খণ্ড

দিনাজপুর জেলার ইতিহাস অনুসন্ধান ( দ্বিতীয় খণ্ড ) দিনাজপুর জেলার ইতিহাস অনুসন্ধান দ্বিতীয় খন্ড  প্রকাশক : চক্রবর্তী এন্ড সন্স পাবলিকেশন  সম...