ডিপ্রেশন -
দেবমিতা পাল
কথাটা বর্তমান দিনে বহুলপ্রচলিত। এখন প্রায় সবার মুখে মুখে ফেরে এই কথাটি। অথচ, সর্বজনবিদিত এই কথাটি নিয়ে এখনো সমাজের সিংহভাগ মানুষের লুকোচুরি'র অন্ত নেই। সঠিক অর্থে ডিপ্রেশড বা অবসাদগ্রস্ত বলতে এখনো অনেকে'ই পাগলামি বুঝে থাকেন। বিশ্বাস হল না তো? বেশ; নিজের কোনো কাছের মানুষ, আত্মীয়, বন্ধু - কাউকে দেখে আপনার মনে হল যে, সে হয়তো খারাপ আছে। সরাসরি প্রশ্ন করে দেখুন,"মন খারাপ?" অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর আসবে,"না তো। মন খারাপ কেন হবে!" এতে'ও যদি হাল না ছেড়ে থাকেন, তাহলে এক ধাপ এগিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন,"কিছু বলতে চাইছো না কেন? ডিপ্রেশনে ভুগছো?" এবারের উত্তর," ডিপ্রেশন! না না, ওসব পাগলামি আমাদের বংশে কারুর কোনোদিন ছিল না। আমার'ও নেই।"
আমরা আমাদের কাছের মানুষগুলোর থেকেও নিজেদের আড়াল করি। অবশ্য এতে সম্পূর্ণ দোষ বোধহয় আমাদের'ও নয়। কারণ সমাজ আমাদের মনের মধ্যে কোথাও না কোথাও একটা ধারণা প্রোথিত করে দিয়েছে; ডিপ্রেশন অর্থ'ই হল পাগলামি। কিন্তু, এই ধারণাটি আদ্যন্ত ভুল। মন খারাপ - আর কয়েকটা শারীরিক অসুস্থতার মতোই একটা অসুখ। অন্য সমস্ত অসুখের মতোই এই অসুখটির'ও চিকিৎসা সম্ভব এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই অসুখ সেরে ও যায়। কিন্তু, এক্ষেত্রে একটি সমস্যা হল - অসুস্থ ব্যক্তি নিজে বা তার চারপাশের মানুষরা বুঝতেই পারেনা অসুখের অস্তিত্ব। আর যদি কেউ বুঝেও থাকেন, তাহলেও চারপাশের লোকে কি বলবে এটা ভেবে নিজের কষ্টের কথা স্বীকার করেন না। নিজের মন খারাপকে মনের মধ্যেই চেপে রেখে আরও জটিল কোনো অসুখের দিকে এগিয়ে যান। বলছি; অন্যের কথা ভেবে,নিজের কষ্টের কথা না বলাটা, 'চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়া'র মত বিষয় হয়ে গেল না?
এইবার আরো একটা বিষয়ের দিকে দেখা যাক; এতক্ষণে অনেকেই ভাবছেন যে অবসাদগ্রস্ত মানুষ দেখলে তারা সহজেই বুঝে যাবেন। বিষয়টা অত সহজ নয়। কারণ আপনি যদি ভেবে থাকেন, যে দুখি দুখি মুখ মাত্রই অবসাদগ্রস্ত; এখানেই আপনি দ্বিতীয় বার ভুল করছেন। বাইরে থেকে আলাদা করে ডিপ্রেশড মানুষ চেনা সহজ নয়। অন্যদের মতোই এইসব মানুষরা নিত্যদিন কাজ করে, খায়, ঘুমোয়। কিন্তু মনের মধ্যে হয়ত পাহাড়প্রমাণ খারাপ লাগা চেপে রাখে, আর সেই খারাপ লাগা চেপে রাখতে রাখতে ই একদিন কোনো চরম পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। তখনো আমাদের সমাজের সিংহভাগ মানুষ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হ'ওয়া তো দূরের কথা, উল্টে সেই মানুষটির জীবন নিয়ে রসালো আলোচনা করে।
কাউকে কোনো শিক্ষা দেওয়া আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, এবার থেকে মন খারাপ হলে সেটা অন্য লোকের কথা ভেবে চেপে রাখবেন না। জীবনটা আপনার - ভালো থাকলে আপনি থাকবেন, খারাপ থাকলেও আপনি'ই থাকবেন। অন্য কেউ আপনার ভালো বা খারাপ থাকার দায় নেবে না। তাই, অন্য লোকের কথা না ভেবে একটু স্বার্থপর হোন। 'ভালো আছি' এই কথাটাই সবসময় বলতে হবে; এরকম বাধ্যবাধকতা নেই। আমরা কেউ'ই সবসময় ভালো থাকি না। মন খারাপ আমাদের সকলের হয়। এই খারাপ লাগাও জীবনের একটা অংশ - এই কথাটা যে যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে, সে তত এগিয়ে যায় একটা সুস্থ জীবনের দিকে। আর জানেন তো, প্রাণ খুলে হাসা যেমন লজ্জার নয় - মন খুলে কাঁদার মধ্যেও কোনো ভয় নেই। এবার থেকে কান্না পেলে কেঁদে ফেলুন; দেখবেন, ভালো লাগছে।
আর আপনারা - যারা দূর থেকে দেখেই অন্য একটা মানুষ সম্পর্কে বিচার-বিবেচনার পর্ব সমাধা করে নিজেদের রায় ঘোষণা করেন; তাদের বলছি, আপনাদের নিজেদের কোনো কাজ নেই বুঝি? কেউ কি আপনাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে? অন্য মানুষের জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া করে আপনাদের লাভ হল কি? ন্যূনতম বোধবুদ্ধি থাকলে নিজেদের 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি'র মতো আচরণ বদলানো'র চেষ্টা করুন। কারুর সম্বন্ধে অকারণে জাজমেন্টাল না হয়ে পারলে, কারুর বন্ধু হ'ওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার কারণে কারুর মুখে হাসি ফুটেছে; এই চিন্তাটা দিনের শেষে আপনাকে'ও তৃপ্তি দেবে। পারলে একটু সময় নিয়ে মানুষের কথা শুনুন, পারলে একটু ভালোবাসুন....
দেবমিতা পাল
কথাটা বর্তমান দিনে বহুলপ্রচলিত। এখন প্রায় সবার মুখে মুখে ফেরে এই কথাটি। অথচ, সর্বজনবিদিত এই কথাটি নিয়ে এখনো সমাজের সিংহভাগ মানুষের লুকোচুরি'র অন্ত নেই। সঠিক অর্থে ডিপ্রেশড বা অবসাদগ্রস্ত বলতে এখনো অনেকে'ই পাগলামি বুঝে থাকেন। বিশ্বাস হল না তো? বেশ; নিজের কোনো কাছের মানুষ, আত্মীয়, বন্ধু - কাউকে দেখে আপনার মনে হল যে, সে হয়তো খারাপ আছে। সরাসরি প্রশ্ন করে দেখুন,"মন খারাপ?" অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর আসবে,"না তো। মন খারাপ কেন হবে!" এতে'ও যদি হাল না ছেড়ে থাকেন, তাহলে এক ধাপ এগিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন,"কিছু বলতে চাইছো না কেন? ডিপ্রেশনে ভুগছো?" এবারের উত্তর," ডিপ্রেশন! না না, ওসব পাগলামি আমাদের বংশে কারুর কোনোদিন ছিল না। আমার'ও নেই।"
আমরা আমাদের কাছের মানুষগুলোর থেকেও নিজেদের আড়াল করি। অবশ্য এতে সম্পূর্ণ দোষ বোধহয় আমাদের'ও নয়। কারণ সমাজ আমাদের মনের মধ্যে কোথাও না কোথাও একটা ধারণা প্রোথিত করে দিয়েছে; ডিপ্রেশন অর্থ'ই হল পাগলামি। কিন্তু, এই ধারণাটি আদ্যন্ত ভুল। মন খারাপ - আর কয়েকটা শারীরিক অসুস্থতার মতোই একটা অসুখ। অন্য সমস্ত অসুখের মতোই এই অসুখটির'ও চিকিৎসা সম্ভব এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই অসুখ সেরে ও যায়। কিন্তু, এক্ষেত্রে একটি সমস্যা হল - অসুস্থ ব্যক্তি নিজে বা তার চারপাশের মানুষরা বুঝতেই পারেনা অসুখের অস্তিত্ব। আর যদি কেউ বুঝেও থাকেন, তাহলেও চারপাশের লোকে কি বলবে এটা ভেবে নিজের কষ্টের কথা স্বীকার করেন না। নিজের মন খারাপকে মনের মধ্যেই চেপে রেখে আরও জটিল কোনো অসুখের দিকে এগিয়ে যান। বলছি; অন্যের কথা ভেবে,নিজের কষ্টের কথা না বলাটা, 'চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়া'র মত বিষয় হয়ে গেল না?
এইবার আরো একটা বিষয়ের দিকে দেখা যাক; এতক্ষণে অনেকেই ভাবছেন যে অবসাদগ্রস্ত মানুষ দেখলে তারা সহজেই বুঝে যাবেন। বিষয়টা অত সহজ নয়। কারণ আপনি যদি ভেবে থাকেন, যে দুখি দুখি মুখ মাত্রই অবসাদগ্রস্ত; এখানেই আপনি দ্বিতীয় বার ভুল করছেন। বাইরে থেকে আলাদা করে ডিপ্রেশড মানুষ চেনা সহজ নয়। অন্যদের মতোই এইসব মানুষরা নিত্যদিন কাজ করে, খায়, ঘুমোয়। কিন্তু মনের মধ্যে হয়ত পাহাড়প্রমাণ খারাপ লাগা চেপে রাখে, আর সেই খারাপ লাগা চেপে রাখতে রাখতে ই একদিন কোনো চরম পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। তখনো আমাদের সমাজের সিংহভাগ মানুষ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হ'ওয়া তো দূরের কথা, উল্টে সেই মানুষটির জীবন নিয়ে রসালো আলোচনা করে।
কাউকে কোনো শিক্ষা দেওয়া আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, এবার থেকে মন খারাপ হলে সেটা অন্য লোকের কথা ভেবে চেপে রাখবেন না। জীবনটা আপনার - ভালো থাকলে আপনি থাকবেন, খারাপ থাকলেও আপনি'ই থাকবেন। অন্য কেউ আপনার ভালো বা খারাপ থাকার দায় নেবে না। তাই, অন্য লোকের কথা না ভেবে একটু স্বার্থপর হোন। 'ভালো আছি' এই কথাটাই সবসময় বলতে হবে; এরকম বাধ্যবাধকতা নেই। আমরা কেউ'ই সবসময় ভালো থাকি না। মন খারাপ আমাদের সকলের হয়। এই খারাপ লাগাও জীবনের একটা অংশ - এই কথাটা যে যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে, সে তত এগিয়ে যায় একটা সুস্থ জীবনের দিকে। আর জানেন তো, প্রাণ খুলে হাসা যেমন লজ্জার নয় - মন খুলে কাঁদার মধ্যেও কোনো ভয় নেই। এবার থেকে কান্না পেলে কেঁদে ফেলুন; দেখবেন, ভালো লাগছে।
আর আপনারা - যারা দূর থেকে দেখেই অন্য একটা মানুষ সম্পর্কে বিচার-বিবেচনার পর্ব সমাধা করে নিজেদের রায় ঘোষণা করেন; তাদের বলছি, আপনাদের নিজেদের কোনো কাজ নেই বুঝি? কেউ কি আপনাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে? অন্য মানুষের জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া করে আপনাদের লাভ হল কি? ন্যূনতম বোধবুদ্ধি থাকলে নিজেদের 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি'র মতো আচরণ বদলানো'র চেষ্টা করুন। কারুর সম্বন্ধে অকারণে জাজমেন্টাল না হয়ে পারলে, কারুর বন্ধু হ'ওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার কারণে কারুর মুখে হাসি ফুটেছে; এই চিন্তাটা দিনের শেষে আপনাকে'ও তৃপ্তি দেবে। পারলে একটু সময় নিয়ে মানুষের কথা শুনুন, পারলে একটু ভালোবাসুন....
খুব সুন্দর লেখা।
ReplyDeleteধন্যবাদ।
Deleteখুব ভালো হয়েছে লেখাটা!
ReplyDeleteধন্যবাদ।
DeleteVery Practical Writing. Best Wishes to Debamita
ReplyDeleteThank you so much
DeleteBest wishes to Debamita. ...Kajal Acharyya
ReplyDeleteThank you
Deleteভালো লেখা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটা লেখা বের করো।
Deleteধন্যবাদ।
ReplyDelete