Tuesday, January 14, 2020


পৌষ পার্বণঃ স্মৃতির আঙিনায়-
কলমে-  অনুপ

     পৌষ মাস শষ্য শ্যামল কৃষি প্রধান বাঙলা ও বাঙালির সুখ-সমৃদ্ধির মাস। অগ্রহায়ণে শুরু হয়ে ধারানুক্রমে পৌষে  সমাপ্ত হয় অন্নপ্রান বাঙালির শষ্যোৎসবের।একই সঙ্গে ইতি টানে সাধারণ মতে সূর্যের দক্ষিণায়ন পর্ব। 

কৃষকেরা বিগত দিনগুলিতে ফসল গোলায় তোলার পর ঘর-দোর নিকানো, ধান সিজানো, ভাপান, আতপ ও উষ্ণ দুই ধরনের চাল করা...।উষ্ণ চাল আবার দু ধরনের -মুড়ির জন্য,আর ভাতের।এরপর ঢেকি পাড়,কুলোয় পাছড়িয়ে খুদ(চালের গুঁড়ো) কুড়ো(ধানের খোসার গুঁড়ো) বের করা, চিড়ে করা,মুড়ি ভাজা, সর্বোপরি জাঁতায় পিষে পিঠের চালগুঁড়ো করা;আরও কতশত খুটিনাটি কাজ।

এসবের অলক্ষ্যে রয়েছে এক উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি-পিঠে,পুলি,পায়েস খেয়ে ও খাইয়ে আতিথেয়তার পাশাপাশি ফসলের দেবীর 'ব্রত' আরাধনা।যাতে সংসারের অভাব দারিদ্রতা দূরীভূত হয়,ঘর-কন্না হাসি খুশিতে সম্বৎসর পূর্ণ থাকে,আগামীর শুভ কাজে কোনো বাধা বিঘ্ন না আসে। বেশিরভাগ গৃহের আরাধনা সংক্রান্তির আগের দিন।
একটি কাঠের জলচৌকি বা পিড়ি বা কাঠের সিংহাসন।তার উপর নতুন ধান দিয়ে চূড়া করা।সেই চূড়ার উপর একটি ধনভর্তি কাঠা।তাতে দূর্বা ও ইঁদুরের মাটি।কাঠাতে সিঁদুরের সিঁথি টানা।সমগ্রটি একখন্ড নতুন বস্ত্র দিয়ে ঘোমটাকৃতির নববধূর আদলে সাজানো।স্থানীয় ছদ(রীতিনীতি) অনুযায়ী  দিন ও পদ্ধতি সামান্য ভিন্ন হতে পারে।আটনের সামনের দুই পাশে দুটি পেঁচা।এর মাঝ বরাবর কাঠের সিঁদুর কৌট,কাঠের চিরুনি,দর্পন,শাঁখা,পলা ও কড়ি।মুখ্য সামনের জলপূর্ণ আম্র পল্লবের ঘট।
কৃষির অনুষঙ্গাদি-খড়ানি ও বর্ষার লাঙল,মই,কোদাল,টাঙনা(লম্বা ডান্ডাযুক্ত সরু মোটা কোদাল,যা মাটির বড়ো চাঙড় তুলতে লাগত),ফাওড়া(লম্বা ডান্ডাযুক্ত বড় কোদাল) দা,কেদে(কাস্তে),দুনি,ধুমুস(কাঠের বৃহৎ হাতুড়ি) ,কুলা,ডালা,ধামা,ঢেকি,টুঙি,জাঁতা সবের গায়ে ভেজা চালগুঁড়োর থোপ।সাধ্যমতো যাবতীয় ফল, পুষ্প ও গৃহে নতুন ধানের চালে প্রস্তুত রকমারি  পিঠা, পায়েস,সুবাসিত গোবিন্দভোগ চালের অন্ন ভোগ পঞ্চ ব্যঞ্জনে সাজিয়ে উৎসর্গ । মহিলারা ছালের কাপড়ে(পট্টবস্ত্র) গলবস্ত্র হয়ে ব্রত কথা ও পাঁচালি পাঠ করেন।আর্যীকরণের রীত্যানুসারে যজমানি প্রথার প্রচলন হলেও কুলীন ব্রাহ্মণরা অন্তজদের গৃহের কোন সংস্কার ও মাঙ্গলিক রীতি থেকে দূরে থাকত।

স্মর্তব্য যে সকল ব্রতের প্রধান উদ্দিষ্ট বস্তু -ঐ জলপূর্ণ ঘট,যা গর্ভধারনের প্রতীকি ব্যাঞ্জনা।আর সিঁদুর বা সিঁদুরের কৌট প্রসঙ্গে যতটুকু জেনেছি তা হলো,এটি রাঢ় অর্থাৎ লাল মাটির উর্বরতা শক্তির প্রতীক।সংস্কৃতে একে বঙ্গজ বলা হয়েছে।সিঁথি শব্দটি 'কোল' ভাষা গোষ্ঠী জাত।রাঢ় অঞ্চলের লাল মৃত্তিকায় কৃষি সভ্যতার ঊষালগ্নে মাতা ধরনীর কর্ষিত ভূমির শষ্য দান ও উর্বরতার কথা হয়তো মানুষের ভাবনায় ঠাঁই পেয়ে নারী ধরনী মাতার ন্যায় সর্বংসহা ও উর্বরতার দ্যোতক হয়ে উঠেছেন। 




এই সকল প্রতীকী ব্যঞ্জনা প্রাধান্যকারী সংস্কৃতির উপর স্তরে হলে তাঁর দার্শনিকতা নিয়ে অহরহ প্রচার ও আলোচনা হতো-হওয়ায় স্বাভাবিক ;কিন্তু তা যখন সামাজিক স্তরের চির অবহেলিত  মানুষের প্রাক ঐতিহাসিক স্তরের নির্মান তখন তা আমাদের ভাবনায় তুচ্ছ,গেঁয়ো ব্যাপার -তাই ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। উপর মহলের যে সংস্কৃতিতে আমি লালিত হচ্ছি সেখানে বর্ণাক্রমানুযায়ী কর্ম নির্দিষ্ট হওয়ায় তা পরিত্যাজ্য। অথচ তা ঐতিহ্য সূত্রে আমারই মাটির ! আবহমান কাল থেকে আমার বিকাশ ও প্রকাশের স্তরে জায়মান থেকে আমাকে, আমার বাঙলাকে,এর সমাজ সংস্কৃতি,সভ্যতাকে আর সবার থেকে অবশ্যই ভিন্ন মাত্রা দান করেছে।
এইভাবে অপরাপর কৃষি বিজড়িত  উপাচারগুলিও সেই সব মানুষদের ভাবনায় জুড়ে বসে।যেমন আলপনায় লক্ষীর পদ চিহ্নের সঙ্গে লতাপাতার ব্যবহার বংশলতিকার দ্যোতক।গবেষকরা কৃষি ভিত্তিক সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া নকসা ও খোদিত চিত্রের সঙ্গে এই পদ চিহ্নের সাদৃশ লক্ষ্য করেছেন।আর সেখানে খননে চিরুনি,দর্পন তো মেলেই। যে দৃষ্টিকোন  থেকেই দেখি না কেন, আমাদের বঙ্গের এই কৃষি ভিত্তিক প্রাকার্য ঐতিহ্য ও চেতনা কত প্রাচীন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে কি?

অতঃপর শষ্যের দেবী লক্ষীর 'ব্রত' উৎযাপন প্রসঙ্গ।সুধী পাঠক এই প্রাক বৈদিক সমাজের শষ্যের দেবী  লক্ষীর সঙ্গে বৈদিক লক্ষী কে গুলিয়ে ফেলবেন না,আশারাখি। যতটুকু জেনেছি বাঙালি হিন্দুরা কোল গোষ্ঠী ও দ্রাবিড়দের থেকে আগত এই ধরনের অপরাপর ব্রতগুলি পালন করত বলে প্রাথমিক স্তরে তারা বৈদিকদের কাছে ব্রাত্য ছিলেন।একটি ব্রাহ্মণ গ্রন্থে,ব্রতধারীদের বেদদ্রোহী প্রাচ্য বলা হয়েছে।অথচ প্রাক বৈদিক এই লোকাচারের উদ্দেশ্য উৎপাদন বৃদ্ধি-ক্ষেতে ও সংসারে,একই অর্থে প্রতিপালন এবং পরম্পরা রক্ষার্থে পূর্বপুরুষকে স্মরন করা।সভ্য মানুষের কাছে এই ধরনের পরম্পরাগুলি চলে আসছে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম চেতনা জাগ্রত হওয়ার বহু পূর্ব থেকেই।সূচনার সেই পর্বে যখন সমাজ ছিল মাতৃ তান্ত্রিক এবং মানুষ অলৌকিকত্বে বিশ্বাসী।যার ঐতিহ্যের ধারা আজও বহমান। এই মাতৃকারূপী আরাধনার আদি উৎস ভারতবর্ষ সহ বিশ্বের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলি।পরবর্তীতে হিন্দু ধর্ম ও মহাজানী বৌদ্ধ ধর্মে এর প্রভাব পড়ে।অবশিষ্ট অন্যান্য প্রাধান্যকারী আরো পরবর্তীকালের ধর্মমত গুলিতে তা পরিহার করা হয়েছে।

এক্ষণে সম্মানীয় পাঠক স্মরণ করুন সিদ্ধাচার্যদের (চুরাশি জন) জীবন কথা;যাদের অধিকাংশ সামাজিক স্তরের সাধারণ শ্রেণির এমনকি এক-চতুর্থাংশ শুদ্র।বাঙলার অধিকাংশ গ্রামই যেন এই সকল কর্মমুখী দার্শনিকদের আবাস ভূমির ক্ষুদ্র সংস্করণ!বাঙলার জনমানসে তাদের কর্মমুখীন ভাবাদর্শের প্রভাব ছিল প্রবল।কৈবর্ত্য বিদ্রোহ দমনের পর পাল রাজারা প্রজাদের বশে রাখতে একই সঙ্গে মহাজানী ধর্মমত ও ব্রাহ্মণ্যবাদ উভয়েরই পৃষ্ঠপোষকতা করেন।মনে হয় ধর্ম সংঘাত ও সমন্বয়ের এই পর্ব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।সেই সময় থেকেই লোকায়ত স্তরের আচারগুলিতে বৈদিক প্রভাব বাড়তে থাকে।

টান মাটির দেশ। পানীয় জল সাধারণ হাতকলে প্রায় উঠেই না।দু চারজনের বাড়িতে সিলিন্ডার কল।গরীব দুঃখী সহ নিম্ন বর্গীয়দের নাওয়া খাওয়া পুকুরের জলেই।তাদের পাড়া আলাদা,বসার জায়গা আলাদা,খাবারের পাত্র আলাদা।ফাল্গুন চৌত্র মাস থেকে পুকুরগুলি শুকাতে শুরু করে।নিদারুন দগ্ধ দিন।তবে জলের মিষ্টত্ব ও হজম শক্তি অপরিসীম হওয়ায় সবেরই স্বাদ তৃপ্তিকর।আর আছে গ্রাম্য রাজনীতি।কিছু লোকের সব ব্যাপারেই মোড়লিগিরি। লাঠির জোড়,জোত জমির তেজ,জাত-পাত-বর্ণের রাঙানো চোখ,নির্মম শোষন, আর নিরক্ষর কিন্তু অশিক্ষিত নয় মানুষগুলিকে একরকম অমানুষ ভাবা যেন স্বাভাবিক ছিল। এই সকল চির অবহেলিত নিম্ন বর্গের সাধারণ মানুষদের রয়েছে নিজস্ব সুস্থ সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ।বিভিন্ন লোকায়ত পার্বণে নাচ,গান, বাজনার মধ্য দিয়ে তার স্বতঃস্ফূর্ত নিদর্শন তুলে ধরত।আজও ভেবে পায় না তাদের এই অফুরান  প্রান ও কায়া শক্তির উৎস কোথায়! আপন ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি বহমান নীরব প্রেম থেকেই কি এই নিরবধিকাল টিকে থাকার সঞ্জীবনী সুধা আহরণ?

আসুন আপনাদের এমন একটি খেলার কথা শোনায় যা একদিকে অবাক করা অপরদিকে মেনে নেওয়া দায়-'পিঠে লড়ায়'।এই অঞ্চলের পিঠে একটু মোটা দাগের।বেশিরভাগই চালগুঁড়ো দিয়ে প্রস্তুত এবং ঝোলা আখের গুড় দিয়ে স্বাদ গ্রহন।আসকে,গড়া পিঠে,সিদ্ধ পিঠে,ভাজা পিঠে,পালো... ইত্যাদি।তবে সরাচোকালির স্বাদ আজও অমলিন।সংক্রান্তির দিন সকালে বাসি পিঠে খেয়ে লাঠি,গুলতি,ছিটকাল, নাহয় খলি হাতে মানুষ চলল গ্রামের বাইরে মাঠে অপর গ্রামের মানুষের সঙ্গে লড়ায় করতে! কখনো সখনো পরিস্থিতি ও চোট আঘাত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত।বিগত কয়েকদিন ধরে গ্রামের রাখালরা বিকালে মাঠে গবাদিপশু চরাতে গিয়ে পরস্পরের উদ্দেশ্যে টিকা টিপ্পনি ছোড়াছুড়ি করে এদিনে লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখত।অংশগ্রহনে সমাজের দূর্বলতম নিম্ন বর্গের সংখ্যাধিক্য থাকলেও উচ্চ ও মান্য বর্গের প্রতিনিধিরা অনেকেই অংশ নিত।মজার বিষয় সেই দ্বন্দ্ব স্রেফ সেদিনের, পরদিন থেকে গ্রামে গ্রামে আবার বনিবনা।তবুও খারাপ দৃষ্টান্ত।এখন বন্ধ হয়েছ বলেই জানি।হলেই ভাল।

প্রশ্ন এর পিছনে কোন কার্য-কারন সম্পর্ক বিদ্যমান ? এক,দীর্ঘদিনের অভুক্ত,অর্ধভুক্ত অধিকাংশ কৃষিজীবি মানুষই এই দুই মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের পাশাপাশি পেট ভরে দুবেলা দু মুঠো খেয়ে এখন হালকা ফুসরতে ধান কাটা মাঠে নতুন পিঠে খেয়ে আপন পিঠের সহন ক্ষমতা হয়তো মাপতে যায়।দু দিন পর আবার তো সেই একই চেনা লড়াই-দূর্দশার জীবনচক্র।দুই,আমার আলোচ্য এলাকার(সালার থেকে কাটোয়া মুখী রেলপথের গঙ্গাটিকুরি তক ডান দিকের বিস্তৃর্ন গ্রামাঞ্চল)২০ -৪০ কিমি, দূরে (কাটোয়া থেকে কীর্ণাহার)ফি বছর মারাঠা লুটেরাদের অর্থাৎ বর্গীর হামলার শিকার হতো গ্রাম বাঙলা।তারই প্রতিরোধ বাহিনীর অনুশীলন হিসাবে প্রাথমিক স্তরে হয়ত এর উৎপত্তি হয়েছিল সম্পদ ও সম্ভ্রম রক্ষার্থে।কেননা লড়াইয়ের মুখ দক্ষিণ, দক্ষিণ -পশ্চিম পানে, অন্য দিকগুলির মাঠে নয়।তিন,একটু বাড়াবাড়ি হলেও আপনাদের সাহস নিয়ে বলছি,প্রাচীন গঙ্গারিডির  বাঙালির যে যোদ্ধৃরূপ যা আলেকজান্ডারের কাহিনী  সূত্রে  ঐতিহাসিকভাবে সত্য,এইটি তার কি কোন অবশেষ? চার,পাঁচালিতে বিনন্দ রাখালের প্রসঙ্গটির বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নে আমরা পাব পশুপালক সমাজে কৃষির দিকে পা বাড়ানোর প্রাথমিক স্তরে নিজেদের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কাহিনী।কষ্ট কল্পনা?

বেলাবেলি রাখালের দল ঘাসের মাঠে বৈকালিক ভ্রমন সেরে গবাদি পশুর পায়ের ধুলো উড়িয়ে যে সংক্রান্তির রাঙা গোধূলি আনে ধরিত্রীর বুকে তাতে ভর দিয়ে নেমে আসে পৌষের বিদায়ী সন্ধ্যা।উলু শঙ্খের দূরপ্রসারী ক্রমান্বিত ধ্বণিতে দিনের আলো আর রাতের আঁধারের সন্ধি নয়-যেন সমাস রচিত হচ্ছে চরাচর ব্যাপী।সাদা-কালোয় মিশ্রন তো নিত্য ঘটে চলেছে।কয়জনই বা দেখেছেন  প্রকৃতি ও মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের- মিশ্রন নয় এমন মিলন! তারপর ঠান্ডায় জড় সড় সব বয়সের স্ত্রী লোকেদের দেখতাম মাঝ উঠানে আলপনা দেওয়া স্থানটিতে একটি পিড়ি মতন রেখে তার উপর ছোট ছোট গোবরের বড়ি করে পাশে চাল গুঁড়ো ছিটিয়ে পৌষ আগলিয়ে গান করছেন-এসো পৌষ,বসো পৌষ.....। কত ফ্যালফেলিয়ে দেখেছি অর্থ বুঝিনি।আজও না।সভ্যভার বিকাশের ঊষালগ্নে নারী জাতিকে কেন্দ্র করে যার অর্থপূর্ণ  বিকাশ, উত্তরোত্তর বিকাশের পর্বে সম্পদের অধিকারে ও বর্ণের বিভাজনে, সংগঠিত ধর্মের শক্ত বাঁধনে সেই নারীই আজ সর্বস্তরে চূড়ান্ত অবমানিত। একইভাবে নিদারুণ শোষন বঞ্চনার শিকার এদেশের আদি সংস্কৃতির উদগাতা ও রক্ষাকর্তা কৃষক সমাজ।তবুও অজ্ঞাতসারে তারা তাদের  ঐতিহাসিক ভূমিকা বুকে পাথর চাপা দিয়ে পালন করে চলেছে।

এর স্বরূপ 'ব্রত' পালনের মধ্যে নিহিত।ব্রতর উদ্দেশ্য 'আমার আরো চায়, আমাকে আরো দাও'।তবে তা প্রকৃতির কাছে প্রার্থনা রূপে -সর্বজনীনতাময়।আর এখন আমাদের এই সময়ের ব্যক্তি সর্বস্ব কালের ব্রত-আমারই চায়, আমাকেই দাও।কার কাছে?  গণ শক্তির দ্বারা পুষ্ট আইনানুগ ক্ষমতাধারীর কাছে।নৈতিক বা অনৈতিক যে ভাবে হোক পেতেই হবে।কাউকে আহত করতে নয়,আবার সকলেই যে এমন তা ও নহেন।যা দেখছি কম বেশি সর্বত্র তা ই বললাম।অথচ এদেশের প্রকৃত কৃষিজীবি মানুষ নিজেদের খুব সাধারণ অবস্থায় কোনক্রমে যুগের পর যুগ শুধু টিকিয়ে রেখেছে তাই না,অন্তত ২৫০০-৩৫০০ বছরের কৃষি ও সংস্কৃতি পরিবর্তীত রূপে,যুগ, কাল ও ধর্মের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ধরে রেখেছেন।

আর পাঁচ জনের মতো এদের কেন ক্ষোভ,দুঃখ,যন্ত্রনা ও ক্ষুধার অনুভূতির তীব্র বহিঃপ্রকাশ তেমন নেই?  স্বভাবধর্ম? কথার উৎস নিহিত বাংলা ভাষা যাদের সৃষ্ট সেই সিদ্ধ আচার্য সহজিয়াদের ( অস্ট্রাল জাতি গোষ্ঠীর) রচনা /পদ এ রাষ্ট্র/শাসক ও ধনীদের বিরুদ্ধে কোনো বিষোদগার পাবেন না।মিলবে আদিম স্বতঃফূর্ত মানবীয় দর্শণস্নিগ্ধ আপন জীবনচর্যা।উত্তরসূরি রূপে যদি বা ছিল উচু তলার লোকেরা নিজেদের স্বার্থে বার বার ব্যবহার করে সেটুকুও নষ্ট করে দিয়েছে।কেন না দারিদ্রতা নিয়েই ভাবনা যাদের সেই উচ্চকোটির কৃষক দরদীরা সাধারণভাবে এদেশের কৃষিজীবি সমাজের উন্নত মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সুস্থ সংস্কৃতি থেকে দূরে অবস্থান করেন।কৃষকের দর্শণ বাদ দিয়ে তাকে কাছে টানা যাবে?তাই এরাও দূরে। নতুবা নিচুতলার মানুষদের খিদের দাবিই হতো দেশের ও দশের মুখ্য দাবি।শুধুমাত্র এক ধরনের লোকায়ত আঙ্গিকের সঙ্গে জড়িত কৃষকেরা নন,আপামর কৃষক সমাজের দিকে তাকিয়েই এই মন্তব্য।আর আমরা শহুরে সুস্থ নাগরিক চেতনা সম্পন্ন মানুষেরা এক-দু পুরুষের মধ্যেই অনেকেই সব ভুলে যাচ্ছি!শুধু ভাবি পরিবর্তীত যুগে ও কালে প্রকৃতি ও মানুষের এই অচ্ছেদ্য সম্পর্ক যথাযথ মান্যতা পেলে ও রক্ষিত হলে আজ মানুষ এতখানি প্রকৃতি বিরুদ্ধ,কৃষক শোষনকারী,নারী বিদ্বেষী ও নিষ্ঠুর হতে পারত না।
★এই স্মৃতি আলেখ্যতে বিভিন্ন সময়ে পঠিত ইতিহাসবিদ ও লোক সংস্কৃতিবিদদের ভাবনার প্রভাব রয়েছে।

Sunday, January 12, 2020



ছাপোশা
বাপ্পা মালী


আমি কখনো সাদা হতে চাই নি।
আকাশের মেঘ ভালো লাগে-
বৃষ্টির আগে মেঘের উৎফুল্লতা থাকে,
তা বড্ড প্রিয়।
চুন-সুড়কির মতো খসে পড়ে মুন্ড
মনে হয় কেউ মুখে অন্ধকার লেপটে দিলো।
তাই নাগরিক হতে চাইনি।
চাইনি আমার নামে কলেজ হোক,
ছাপ্পা চলুক,
কেউ এসো বলুক-
তোমার বুকের উপর দাঁড়িয়ে আছি।
ছাপোশা ঘুম।
চোখ-নাক বন্ধ করে পড়ে থাকা।

ভাত উথলে গেলে-
মা খেতে দেয়।
নাগরিক জীবনে এসব থাকে না
প্রতিদিন মিউজিক্যাল চেয়ার হয়।
   


         বাপ্পা মালী
    বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর
  

বার্ধক্য জীবন           
প্রদীপ কুমার সামন্ত  

বার্ধক্য জীবন , বড় কঠিন জীবন
ভগ্ন শরীরে মন্হর গতিতে পথ চলা
         নিকষ কালো অন্ধরাতে
          অতীত জীবনের কথা বলা  ।

অতৃপ্ত বাসনা হৃদয়ে জ্বালা দেয়
এত সাধ, এত ভালবাসা
অর্থ , যশ , প্রভাব , প্রতিপত্তি
সব ছেড়ে চলে যেতে হবে একদিন
        নীল নীলিমার সুদূরপারে  ।

ঘুমিয়েছে পলাতকা মেঘ
হারিয়েছে তার গতিপথ
যুদ্ধবাজের হাতে নেমেছে শিথিলতা
ক্লান্ত হৃদয়ে , ভগ্ন শরীরে
অলস ও অবশতার বীজমন্ত্র উপস্হিত ।

উজ্জ্বল আলোকরশ্মি অস্পষ্ট মনে হয়
দেহের নানা স্হানে ক্ষত ও যন্ত্রণাময়
আশায় আর বুক বাঁধে না
রঙিন স্বপ্নে গলা সাধে না
        শেষ তরী বাইবার প্রতিক্ষায়
         প্রহর গোণে দগ্ধহৃদয়  ।
================================
প্রেরক - প্রদীপ কুমার সামন্ত / সম্পাদক- দীপশিখা/ উমেদ পুর , পোষ্ট - চাউল খোলা , জেলা - দঃ 24 পরগণা , পিন্- 743377







গল্পঃ
ময়না  তদন্ত
স্বাধীন চক্রবর্তী 

মা বাবার মাত্র অতি আদরের মেয়ে ছিলাম আমি ।অন্য দশটি মেয়ের মতোই বন্ধুদের সাথে কলেজ যাওয়া, আড্ডা মারা, ঘুড়তে যাওয়া এই সব করে আমার দিন বেশ আনন্দে কেটে যাচ্ছিল আমার বই পড়া ও এডবেঞ্চার প্রিয় ছিলাম। মা-বাবার এক মাত্র মেয়ে বলেই আমার আবদারের সীমা ছিলনা।
আর আমার সব আবদার ও পূর্ন করতো মা বাবা।
আমি লেখা-পড়া করছি সাথে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতেও জব করছিলাম। একসময় কোম্পানি থেকে বলা হল এই বছর পিকনিক হবে বান্দরবানে। যথারীতি আমরা গাড়ীতে উঠি বান্দবানের উদ্দেশ্য।আমি কখনো বান্দরবন যাই নি। আর মনে মনে পাহাড় দেখা পাহাড়ে ঘুড়ার এক এডভেঞ্চার এডভেঞ্চার ভাব চলে আসল। ইচ্ছে পাখিনা যেনো পাখা মেয়ে দিয়েছে দূর পাহাড়ের গায়ে। সেই দিনটি ছিল শুক্রবার অফিসের সকল কর্মচারী সকাল ৭ টায় এসে হাজির হলেন। এবং ৮ টায় গাড়ি ছেড়ে দিলেন। পাহাড়ের আকা-বাঁকা, উঁচু-নিচু পথ ধরে গাড়ি ছুটে চলেছে বান্দরবান এর দিকে। আমি গাড়ির জানালা দিয়ে পাহাড় আর সবুজের সমারোহ দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল যেনো কোন এক রূপের দেশে এসে গেছি। এই সব দেখতে দেখতে হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো, আমাদের ড্রাইভার বললেন গাড়ি মেঘলায় এসে গেছে। মেঘলায় ২০ মিনিট থাকবে তারপর সবাই যেনো আবার গাড়িতে চলে আসে।সবাই গাড়ী থেকে নেমে কেউ ছবি নিচ্ছল কেউ ঘুড়ছিল। আমি আর জয়াদি সেল্ফি নিচ্ছলাম ।আমাদের জয়াদি সেল্ফি পাগল মানুষ, তিনি সারা দিন সেল্ফি তুলেই কাটাতে পারেন। ও বলা হয়নি জয়া দি হচ্ছেন আমার বস। আমরা সবাই বেশ কিছুক্ষণ সেখানে ঘুরা ঘুরি করার পর আমরা গাড়ীতে উঠি। গাড়ী এগিয়ে চলেছে আকা-বাকা উঁচু-নিচু পথ ধরে। গাড়ী যখন নিচের দিকে নামতে থাকে তখন মনে হয় এই বুজি গাড়ী উলঠে গেলো। এই উঁচু নিচু করতে করতে গাড়ী এগিয়ে চলেছে। একটা তিন রাস্তার মাথায় এসে যখন গাড়ি উপর দিকে উঠতে শুরু করল তখন হৃদয় ভাই বললো আমরা নীলাচল যাচ্ছি। আমাদের হৃদয় ভাই এর বাড়ি এখানেই তাই তিনি সব কিছুই চিনেন আর জানেন। একসময় আমাদের গাড়ী নীলাচল এসে দাড়ায়। আমি গাড়ি থেকে নেমে চার দিকে দেখতে লাগলাম অসাধারণ সুন্দর একটা যায়গা। চারপাশের পাহাড় গুলে দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মাঝখানে ছোট ছোট গ্রাম। আমার তখন মনে হচ্ছিল যেনো দুইটা পাখা মেলে উড়ে উড়ে বেড়ায় আর ঘুরে ঘুরে দেখি। কখন যে রিয়াদ ভাই আমার পাশে এসে দাড়াঁলো বুঝতেই পারিনি। রিয়াদ ভাই বললো ওই দেখুন স্বর্ণ মন্দির দেখা যায়। আর ওই দিকে দেখুন রামযাদি। বহু দূর থেকে এই দুইটি মন্দির এর চূড়া দেখা যাচ্ছে, খুবই সুন্দর এই দুইটা মন্দির। দুপুরে এখানেই লাঞ্চ করে গাড়ি স্বর্ন মন্দির যাবে। আমি মন্দির, পাহাড় গ্রাম দেখছিলাম। আর মাঝে মাঝে সেল্ফি নিচ্ছিলাম। আমাদের কলিক তোহিদ এসে বলল এখানে আর কতখন দাঁড়িয়ে থাকবেন? চলুন ঘুরে দেখা যাক যদিও এই ছেলেটাকে আমি তেমন পাছন্দ করিনা কিন্তু সেটা বুজতেও দেয়না। সবাই যে যার মতো ঘুরছে ছবি তুলছে। আমাদের বিবেক ভাই সবার থেকে আলাদা সে ঘুরা-ঘুরি থেকে থেকে ছবি তোলাতে বেশি আনন্দ পাই বলে মনে হয়। আমরা সবাইকে তিনি বিভিন্ন ভাবে ছবি তুলে দিচ্ছেন। খুব সাদা সিধে মানুষ আমার কলিগ বিবেক। আমরা আর রাতুল কিছুক্ষণ সেখানে একটা ব্যঞ্চিতে বসি। হটাৎ হ্রদয় ভাই বলেন রিয়া চলো আমরা নিচের দিকে যাই ওখানে খুব সুন্দর। আমি বললাম চলুন তাহলে সবাইকে নিয়ে যায়। একটু ঘুড়ে দেখাও হবে আর সাথে এডভেঞ্চার ও হবে। হ্রদয় ভাই বলেন সবাইকে নিয়ে গেলে এডভেঞ্চারের মজা কই। আমিও ভাবলাম তাই তো সবাই গেলে মজা কই? তায় আমি হ্রদয় ভাই আর তোহিদ হাটা ধরলাম। একটু নামার পর পাহাড়ের মাঝখানে রাস্তা আর নিরবতা দেখে একটু ভড়কে গেলেও সেটা প্রকাশ করিনি। আমাদের কে দেখে বিবেক ছুটে এসে বলল আমাকে ফেলে যাচ্ছো কোথায়? অগত্য তাকেও সঙ্গে নেওয়া হলো। কিছু দুর যাওয়ার পর দেখি পাহাড় আর পাহাড়। ভয়ানক নিরবতায় যেনো একটা মায়া কাজ করছে। বিবেগ ভাই ছবি তুলেই যাচ্ছে। হ্রদয় ভাই আর তোহিদ দুরে দাড়িয়ে কি সব বলছে। আমিও ভয় আর আনন্দ নিয়ে ছবি তুলছি আর প্রকৃতির সুন্দর্য উপভোগ করছি। হঠাৎ তোহিদ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি প্রথমে হতবাক হয়ে গেলাম। কিন্তু পরক্ষণে বুজতে পারলাম আমার সাথে কি ঘটতে চলেছে। তাই প্রান পনে চিৎকার করতে গিয়েও পারলাম না। হ্রদয় আমার মুখচেপে ধরেছে। তারপর আমার উপর শুরু করল অমানবিক অত্যাচার। বিবেক এই ঘটায় প্রথমে বিব্রত হলেও পরে সেও পশু হয়ে যায়। আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। তাদের পাশবিক নির্যাতন শেষ হওয়ার পরে আমার শ্বাস রোদ করে দেওয়া হলো। আমি দেহ থেকে বেড়িয়ে গেলাম। আমি সব দেখতে শুনতে পাচ্ছি কিন্তু কিছু বলতে পারছিনা। তারা আমার দেহটাকে ওখানেই ফেলে চলে যাই। আমি আমার দেহের পাশে বসে আছি আর কাদঁছি, চিৎকার করছি কিন্তু আমার আওয়াজ কেউ শুনছেনা।এই বান্দরবন আর এডভেঞ্চার আমার সুন্দর জীবনের ইতি টেনে দিলেন। এই ভাবে ৫দিন কেটে গেলো আমার দেহ কেউ খুজে পেলোনা। ৬ দিনের মাথায় এক কাটুরে আমার দেহ খুজে পাই। পুলিশ আমার দেহ নিয়ে যাও পোস্টমর্টেম করার জন্য। আমার হত্যার সন্দেহে বিবেগ,তোহিদ,আর হ্রদয়, সহ বেশ কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু উপযুক্ত প্রমানের জন্য আমার পোস্টমর্টেম রিপোট প্রয়োজন। আমার দেহটাকে অন্ধকার একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। ভয়ানক দেখতে এক ডোম আমার দেহটা কে খন্ড বিখন্ড করছে। আমার চোখের সামনেই ডোমটা আমার পেট থেকে নাড়িভুড়ি সব বেড় করছে কাটছে, সে এক ভয়ানক দৃশ্য যেটা বলে বুঝানো যাবে না।আমার পোস্টমর্টেম এর রিপোর্ট তৈরি করতে একজন ডাক্তার এসেছিলেন আর তিনি তেমন কোন টেষ্ট না করেই রিপোট দিলেন এইটা একটা এক্সিডেন্ট। আমার বডিতে ধর্ষনের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়ায় শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে আর এই রিপোর্ট পেয়ে অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে গেলো। না যানি আমার মতো আরো কত অসহায় নারী ন্যযবিচার পাচ্ছেনা। টাকার তৈরির মিত্যা ভুয়া বা নকল রিপোর্ট এর কাছে হেরে যাচ্ছে প্রতিবার প্রতিক্ষণ। আর সেই রিপোর্ট এর সহায়তায় নরপিশাচের দল বুক ফুলিয়ে ঘুড়ে বেড়ায় আমাদের এই সমাজের মাঝে আর আমাদের থাকতে হচ্ছে মানব সমাজের বাইরে। ধর্ষনের পরে মারা গেলে তো বেচেঁ গেলো। আর মারা না গেলে অই মেয়েটাকেই কটু কথার তিক্ত কুঠারের আঘাতে মৃত্যু দেয় প্রতিক্ষণ এই মানব সমাজ। আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ষক নরপিশাচ গুলো নিরাপরাধ আর মহা অপরাধী সেই ধর্ষিতা নারী। 



কবি পরিচিয়:-
নাম:- কাঞ্চন চক্রবর্তী (স্বাধীন)
পিতা:- মিলন চক্রবর্তী
মাতা :- তাপসী চক্রবর্তী
জন্মস্থান:- লোহাগাড়া,চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
মো:-০১৬২৬৭৪৮৮৪৯




বারো মাসে
শ্রীকান্ত মাহাত

ফাগুনে আগুন
চৈতে দ্বিগুণ।
বৈশাখে ঝড়
জৈষ্ঠ্যে উথাল পাথাল।
আষাঢ়ে বান
শরাবনে ধান।
আর ভাদরে  হয় টান।
আশ্বিনে পার্বণ
বিটি ছেলার আগমণ।
কার্তিকে কার্তিক সিনান
যে করে সে পূণ্যবাণ।
আঘনে ক্ষেতে খামার
বেলাটার বড চাড়।
পৌষে পৌষালি
আর মাঘে মাঘি পূর্ণিমা।



Sreekanta Mahato village Pandrama Post office Satra police station Purulia Muffasil District Purulia State West Bengal Country India pin number 723154.mob.8016621090.




            যুগান্তের পথে
        সূত্রা সরকার  ( সাহা ) 
     

যুগ থেকে যুগান্তের পথে এগিয়ে চলেছি আমরা সবাই _
সাগর থেকে মহাসাগরের অতলতলে,ডুব্ দিয়েছি ডুবুরি হয়ে, 
মণি মাণিক্য রত্নরাজি পাবো বলে বুঁদ হয়ে নেশায় ।
সূর্য উদয় থেকে সূর্যাস্ত হেঁটে হেঁটে চলেছি __আগুন পায়ে, 
ধরার বুকে রেখে যাবো আমরা আমাদের গলদঘর্ম অগ্নিসনান্
কর্মশালার কর্মী আমরা গেয়ে যাবো জীবন পথের গান ।
চন্দ্র আলোকিত আলোক পথে পূর্ণিমার নিশি যাপন্, 
জোছনভরা মোহময়ী রাতে, কোটি কোটি গ্রহ তারকার সাথে, 
তোমার আমার মিলন বেলা এঁকে যাবে জীবনের জয়গান ।
অনন্ত যাত্রার যাত্রী আমরা _নব নব নব বাণী, নব জাগরণ ,
অম্ঋতকুম্ভের সন্ধানে জীবন _নদী বাইবে খেয়া খেয়ালবিহীন, 
ছড়িয়ে যাবো ফুলসুরভি, রেখে যাবো অম্ঋতগান অমৃতবাণী অন্তহীন্।





আমার ঠিকানা :___সেক্টর _3 
সল্টলেক কলকাতা









প্রমীলা
---------------- সুজন মন্ডল ।

কোথায় লুকিয়ে আছেন?
কবি সম্মেলনে কবিতা পাঠ করা :
সুবিধাবাদী ধান্ধাবাজ কবি'রা—
দেখুন,
কিভাবে "সভ্যের মুখোশে বর্বরে"র" দল
আমার ঘরে মেয়ে প্রমীলা'কে ধর্ষণ করে,
হাতের,
পায়ের,
গলার শিরা কেটে :
পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে?
প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি'র মত—
লিখুন,
সে কথা,
কিভাবে রক্তাক্ত হয়েছে?
আমার মেয়ে'র শরীর—
তারপর, টাঙিয়ে দিন!
মরা আদালতে'র দরজা'য় :
ধর্ষকদে'র শাস্তি'র দাবী'তে—
.
কোথায় লুকিয়ে আছেন?
চেতনা ফেরি করা এযুগে'র :
চরিত্রহীন বুদ্ধিজীবী'রা—
দেখুন,
কিভাবে আমার ফুলে'র মত
আদরে'র মেয়ে প্রমীলা'কে, 
মানুষরূপী নরখাদক খুবলে খুবলে খেয়েছে?
বলুন,
সে কথা চিৎকার করে!
বিভিন্ন বক্তৃতা সেমিনারে :
ধ্বজা ভাঙ্গা সমাজে'র কানে কানে—
.
কোথায় লুকিয়ে আছেন?
প্রতিবাদে'র তুফান তোলা!
আন্দোলনে'র নেতা-নেত্রীরা—
দেখুন,
কিভাবে শিমুল তুলো'র মত নরম,
আমার স্নেহে'র মেয়ে প্রমীলা'কে,
জীবন্ত খেয়ে নিল?
এই সমাজ সংস্কৃতি সাহিত্যে লালিত :
একদল ফুটফুটে মাতাল যুবক—
তুলুন,
সে কথা বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে'র সমাবেশে—
জানুক সবাই!
এই সমাজ আর মানুষে'র বসবাসযোগ্য নই....

----------------------------------------------------------
সুজন মন্ডল খিদিরপুর বুনিয়াদপুর
দক্ষিণ দিনাজপুর পশ্চিমবঙ্গ

ডিপ্রেশন -
দেবমিতা পাল

কথাটা বর্তমান দিনে বহুলপ্রচলিত। এখন প্রায় সবার মুখে মুখে ফেরে এই কথাটি। অথচ, সর্বজনবিদিত এই কথাটি নিয়ে এখনো সমাজের সিংহভাগ মানুষের লুকোচুরি'র অন্ত নেই। সঠিক অর্থে ডিপ্রেশড বা অবসাদগ্রস্ত বলতে এখনো অনেকে'ই পাগলামি বুঝে থাকেন। বিশ্বাস হল না তো? বেশ; নিজের কোনো কাছের মানুষ, আত্মীয়, বন্ধু - কাউকে দেখে আপনার মনে হল যে, সে হয়তো খারাপ আছে। সরাসরি প্রশ্ন করে দেখুন,"মন খারাপ?" অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর আসবে,"না তো। মন খারাপ কেন হবে!" এতে'ও যদি হাল না ছেড়ে থাকেন, তাহলে এক ধাপ এগিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন,"কিছু বলতে চাইছো না কেন? ডিপ্রেশনে ভুগছো?" এবারের উত্তর," ডিপ্রেশন! না না, ওসব পাগলামি আমাদের বংশে কারুর কোনোদিন ছিল না। আমার'ও নেই।"

আমরা আমাদের কাছের মানুষগুলোর থেকেও নিজেদের আড়াল করি। অবশ্য এতে সম্পূর্ণ দোষ বোধহয় আমাদের'ও নয়। কারণ সমাজ আমাদের মনের মধ্যে কোথাও না কোথাও একটা ধারণা প্রোথিত করে দিয়েছে; ডিপ্রেশন অর্থ'ই হল পাগলামি। কিন্তু, এই ধারণাটি আদ্যন্ত ভুল। মন খারাপ - আর কয়েকটা শারীরিক অসুস্থতার মতোই একটা অসুখ। অন্য সমস্ত অসুখের মতোই এই অসুখটির'ও চিকিৎসা সম্ভব এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই অসুখ সেরে ও যায়। কিন্তু, এক্ষেত্রে একটি সমস্যা হল - অসুস্থ ব্যক্তি নিজে বা তার চারপাশের মানুষরা বুঝতেই পারেনা অসুখের অস্তিত্ব। আর যদি কেউ বুঝেও থাকেন, তাহলেও চারপাশের লোকে কি বলবে এটা ভেবে নিজের কষ্টের কথা স্বীকার করেন না। নিজের মন খারাপকে মনের মধ্যেই চেপে রেখে আরও জটিল কোনো অসুখের দিকে এগিয়ে যান। বলছি; অন্যের কথা ভেবে,নিজের কষ্টের কথা না বলাটা, 'চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়া'র মত বিষয় হয়ে গেল না?

এইবার আরো একটা বিষয়ের দিকে দেখা যাক; এতক্ষণে অনেকেই ভাবছেন যে অবসাদগ্রস্ত মানুষ দেখলে তারা সহজেই বুঝে যাবেন। বিষয়টা অত সহজ নয়। কারণ আপনি যদি ভেবে থাকেন, যে দুখি দুখি মুখ মাত্রই অবসাদগ্রস্ত; এখানেই আপনি দ্বিতীয় বার ভুল করছেন। বাইরে থেকে আলাদা করে ডিপ্রেশড মানুষ চেনা সহজ নয়। অন্যদের মতোই এইসব মানুষরা নিত্যদিন কাজ করে, খায়, ঘুমোয়। কিন্তু মনের মধ্যে হয়ত পাহাড়প্রমাণ খারাপ লাগা চেপে রাখে, আর সেই খারাপ লাগা চেপে রাখতে রাখতে ই একদিন কোনো চরম পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। তখনো আমাদের সমাজের সিংহভাগ মানুষ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হ'ওয়া তো দূরের কথা, উল্টে সেই মানুষটির জীবন নিয়ে রসালো আলোচনা করে।

কাউকে কোনো শিক্ষা দেওয়া আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, এবার থেকে মন খারাপ হলে সেটা অন্য লোকের কথা ভেবে চেপে রাখবেন না। জীবনটা আপনার - ভালো থাকলে আপনি থাকবেন, খারাপ থাকলেও আপনি'ই থাকবেন। অন্য কেউ আপনার ভালো বা খারাপ থাকার দায় নেবে না। তাই, অন্য লোকের কথা না ভেবে একটু স্বার্থপর হোন। 'ভালো আছি' এই কথাটাই সবসময় বলতে হবে; এরকম বাধ্যবাধকতা নেই। আমরা কেউ'ই সবসময় ভালো থাকি না। মন খারাপ আমাদের সকলের হয়। এই  খারাপ লাগাও জীবনের একটা অংশ - এই কথাটা যে যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে, সে তত এগিয়ে যায় একটা সুস্থ জীবনের দিকে। আর জানেন তো, প্রাণ খুলে হাসা যেমন লজ্জার নয় - মন খুলে কাঁদার মধ্যেও কোনো ভয় নেই। এবার থেকে কান্না পেলে কেঁদে ফেলুন; দেখবেন, ভালো লাগছে।

আর আপনারা - যারা দূর থেকে দেখেই অন্য একটা মানুষ সম্পর্কে বিচার-বিবেচনার পর্ব সমাধা করে নিজেদের রায় ঘোষণা করেন; তাদের বলছি, আপনাদের নিজেদের কোনো কাজ নেই বুঝি? কেউ কি আপনাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে? অন্য মানুষের জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া করে আপনাদের লাভ হল কি? ন্যূনতম বোধবুদ্ধি থাকলে নিজেদের 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি'র মতো আচরণ বদলানো'র চেষ্টা করুন। কারুর সম্বন্ধে অকারণে জাজমেন্টাল না হয়ে পারলে, কারুর বন্ধু হ'ওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার কারণে কারুর মুখে হাসি ফুটেছে; এই চিন্তাটা দিনের শেষে আপনাকে'ও তৃপ্তি দেবে। পারলে একটু সময় নিয়ে মানুষের কথা শুনুন, পারলে একটু ভালোবাসুন....

                                                                     


জীবন যুদ্ধে
ইন্দিরা গাঙ্গুলি

জীবন যে শুধু চলার নাম,
থেমে গেলেই ব্যর্থ জীবন;
কান্না হাসি সুখ দুঃখ,
সাথে নিয়েই চলতে হবে তাই;
চলার পথে অনেক বাঁধা আসবে ঘুরে ফিরে,
তবু যদি চলা থামাও;
তবেই হবে হারতে।
তাই তোমরা পথের কাঁটা দূর করে,
এগিয়ে চলো সামনের দিকে;
বাঁচতে গেলে সবাই কেই  যুদ্ধ করতে হবে,
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ নয়,
এতো জীবন যুদ্ধ।







 অনন্যা মন্ডল

  জীবন

রাতের অন্ধকার কাটিয়ে ফুটবে ভোরের আলো,
নতুন দিনের শুরুটা হোক না অন্যরকম,
পুরোনো সব ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু করো,
জীবন মানে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ নতুন কিছু অভিজ্ঞতা,
নতুন করে কিছু নতুন ভাবে শুরু করা ,
না হেরে গিয়ে সততার সাথে জীবনে বেঁচে থাকা,
আনন্দে থেকে খুশিতে জীবনকে ভরিয়ে রাখা.....



পোষ্ট - পতিরাম
থানা - বালুরঘাট
জেলা - দক্ষিন দিনাজপুর





শর্মামশাইয়ের বনভোজন

ব্রজকিশোর রজক

বনভোজনের জন্য রেডি ভীষ্মলোচন শর্মা
কোথায় যাবে চিন্তা করে চায়না নাকি বার্মা।
কি কি খাবার খেতে হবে তৈরী করে লিস্টি-
থাকতে হবে নোনতা টক, একটুখানি মিষ্টি।

শর্মামশাই ভাঙ্গা খাটে শুয়ে দেখে স্বপ্ন
শীতেরবেলা বনভোজনের নিতেই হবে যত্ন।
হাভাতে তাঁর সংসারতে নাহোক ভালো রান্না
বনভোজনে না বললেই স্ত্রী জুড়ে দেন কান্না।

পকেটে হাত দিয়েই দেখেন এক্কেবারে ফাঁকা
কি করবে এখন বাবু বন্ধ জ্ঞানের চাকা।

জঙ্গলেতে আগুন জ্বলার খবর তখন এল
শর্মামশাই মনকমলে একটু বাতাস পেল।।






গ্রাম+ পোস্ট : টাঙ্গিনোয়াদা
জেলা: পুরুলিয়া
পশ্চিমবঙ্গ
পিন নং: ৭২৩১৩০






            গোত্র
----সৌমেন সরকার

আমি দেখেছি মানুষের মৃত্যু
আর মৃত্যু দেখেছি মনুষ্যত্বের
চারিদিক দাউদাউ করে জ্বলছে
আগুনের লেলিহান শিখায় পদানত সর্বস্ব!

চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে পোড়া হৃদয়,
প্রোগ্রেসিভ চিন্তাভাবনার ডেডবডিগুলো
ও লোভ মেশানো পোড়া বারুদের গন্ধ...

আমি মৃত্যু দেখেছি শিক্ষার
আমি মৃত্যু দেখেছি স্বাস্থ্যের
আমি মৃত্যু দেখেছি আপন অস্তিত্বের
তাই এখন আমি-
এক নামগোত্রহীন পোড়া মাংসপিণ্ড মাত্র!



 কেন চলে গেলে?
শিব ব্রত গুহ

কেন চলে গেলে আমায় ছেড়ে তুমি?
তোমায় যে বড় ভালোবাসতাম আমি।
তুমি যে ছিলে আমার প্রথম ভালোবাসা,
তোমাকে ঘিরে ছিল আমার সব স্বপ্ন,
আর আশা।
আমার ভালোবাসার দাম তুমি যে দিলে না,
আমার সাথে ভালোবাসার নামে তুমি যে,
করে গেলে ছলনা।
তোমায় ভালোবেসে আমি সর্বস্বান্ত হলাম,
এখন ভাবি, কেন? কেন? আমি তোমায়
ভালোবাসতে গেলাম?
ভালোবাসার প্রকৃত মানে তুমি জানো না?
তাই তো, আমায় দিতে পারলে এত যন্ত্রনা,
শুধু যন্ত্রনা।
ভালোবাসার অভিনয় জানো ভালোই তুমি,
তোমায় ভালোবেসে দগ্ধে দগ্ধে মরছি
আমি।
হে সুচরিতা, যে কষ্ট তুমি দিলে আমায়,
ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, সেই
কষ্ট যেন তোমায় কখনো পেতে না হয়,
পেতে না হয়,
পেতে না হয়।



শিবব্রত গুহ
৩/এ, কে.পি. রায়. লেন,
পোস্ট ঃ হালতু,
থানা ঃ গড়ফা,
কোলকাতা - ৭০০ ০৭৮,



অথবা                 
 অরুণাভ দত্ত           



     দিনের শেষে মর্মস্পর্শী আকাশ                                    চেনা অহংকার আর অস্থিরতার পিঞ্জর                                 চলছি নীল ছায়ার সুদূরে --                                  উড়ে যাওয়া বসন্তের কম্পাঙ্ক                     
  নির্বাক সঙ্গম ও অনুমানে                           
    অথবা বহুমাত্রিকতার প্রেমে                          বিলাসী ঢেউয়ের আস্তানা থেকে                                       আহত বর্ণমালার প্রস্তাবনা                     
       আর নান্দনিক ছিন্নমূলের উপসংহার                             ভেসে যায় হলুদ বিহ্বলে...                               



বালুরঘাট,দক্ষিণ দিনাজপুর,পিন - 733101)


 মায়ের হাতের পিঠে

চন্দন চক্রবর্তী

শীতটা এলেই মনে আসে
পিঠে পুলির কথা
হারিয়েছি যা ছেলেবেলায়
পাই যে মনে ব্যাথা ।

হারিয়েছে আজ খেজুর রসে
ভরা মাটির হাঁড়ি
নতুন ধানের চালের গুঁড়োর
গন্ধে বাতাস ভারী ।

পাটালি গুড়ের কথায় মনে
ভেসে আসে ছবি
ঝোলা খেজুর গুড়ের কথা
তাও কি ভুলতে পারি !

দুধ আর কোথায় মেলে এখন
দুধ মেলে না মোটে
সব চেয়ে বেশি মনে আসে
মায়ের হাতের পিঠে ।।



চন্দন চক্রবর্তী,    2 নাম্বার রোড,  গ্রাম : প্রীতিনগর,  পোস্ট : প্রীতিনগর, থানা : রানাঘাট,  জেলা : নদীয়া,  পিন : 741247





*অবক্ষয়*
 *সীমা চক্রবর্তী*

এই পৃথিবীর গহীনে
সময়ের অবগাহনে
ক্ষয় রোগ লেগেছে বুঝি
তবুও তারে নিয়মিত
একই ভাবে যথাযথ
রঙিন পেয়ালা মাঝে খুঁজি।

চাঁদ টাও ক্ষয়ে গেছে
কিছু তারা নিভে গেছে
জ্যোৎস্না নাচে প্রেতলোকে
শিশিরের শীতল জলে
কতো বিষ আছে গুলে
কতো কথা মরে গেছে শোকে।

নিকষ আঁধার মাঝে
নক্ষত্রের কান্না বাজে
দুরাত্মা করে ফিস ফিস
সাত রঙ গেছে ধুয়ে
শোণিত স্রোতে চুয়ে
ভরে আছে নিকোটিনের বিষ।

জীবনের মূল কথা
বেঁচে থাকার রপ্ত তা
সূর্যটাও দিয়ে যাবে মাত
ফিরে আসবে না আর
যে সময় হয়েছে কাবার
আগামীর মৃত্যু আলবাত।

ছাবির আহমেদ







মরীচিকা
   ✍️ছাব্বির আহমেদ

মরুর উপর ছুটি আমি  তোমার পিছু ছেড়ে,
পাইনা অবকাশ।
চিকন থেকে গন্ধ ছড়ায় বুকের মাঝে লেলিহান শিখা;
দেখে তোমার চোখের চাওনি।
নিরাভরণ দেহে ছড়ায় উত্তাপ,
সকল দুঃখ গেল ঘুচে।
দূর থেকেই দেখেছিলাম তোমার অবস্থান;
মুখ হইলো রজনীগন্ধ্যা।
সাগর জলে ফেলিলাম আমার পদাতল;
হৃদয় হইলো ক্ষতবিক্ষত।
দেখিলাম চুপি চুপি, আমারি ভুলের জন্য; তোমার মিথ্যা অবস্থান।
শেষ বিকেলে তোমার দিকে যখন ঘুরে দেখলাম; আসা ছাড়িলাম ফিরে পাবার।
রাতের আঁধারে ডুবলো আমার তরী;
মন হইলো ব্যাকুল।
বালির বাঁধে পড়িল চাপা তোমার দেহ।
বিঁধিলো সর বুকের মাঝে, হারালাম তোমার সুন্দর মুখ।




বিপ্লব গোস্বামি : কবি বিপ্লব গোস্বামী ১৩৯৪ সালের ৩০ চৈত্র আসামের করিমগঞ্জ জেলার কালিবাড়ি গ্ৰামে জন্ম গ্ৰহণ করেন।তার পিতার নাম বাবুলাল গোস্বামী ও মাতার নাম সেতু গোস্বামী।উচ্ছ শিক্ষা সম্পূর্ণ করে তিনি আসাম সরকারের অধীন শিক্ষকতায় রত।তিনি খুব সাহিত‍্যনুরাগী।নিয়মিত সাহিত‍্য চর্চায় রত।দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হচ্ছে।কবি ঈশান বাংলা সাহিত‍্য পত্রিকার সম্পাদক। ২০১৮  সালে বরাক উপত‍্যকা বাঙ্গালি কবি পরিষদ ও মানব ধর্ম বিকাশ পরিষদ কবিকে 'কবিশ্রী' সম্মাননা ও ২০১৯ সালে ত্রিপুরা সাহিত‍্য পরিষদ কবিকে 'কাব‍্যজ‍্যোতি' খেতাব প্রদান করে।এছাড়াও কবি অনেক সম্মাননা লাভ করেছেন।




বিপ্লব গোস্বামী র দুটি কবিতা


তুই আজো বুঝলি না

    বিপ্লব গোস্বামী

    আমি যে তোর কে
  তুই আজো বুঝলি না।
 কতটা তোরে বাসি ভালো
একদিনও খোঁজ লইলি না।

আমার বদলে অন‍্য কেউ
তোর আছে হৃদয় জুড়ে।
আড়াল হতে বাসব ভালো
  কভু যাব না দূরে সড়ে।

   যতই তোই ঘৃণা করিস
   তবু ভালোবাসব তকে।
  নাইবা পেলাম স্মৃতি তবু
     আগলে রাখব বুকে।




ভাইফোঁটা

বিপ্লব গোস্বামী

বোনে হাতের ফোঁটা নিয়ে
      ভাই করল পণ ;
তোর মতো আর কাউকে
    হতে হবে না ধর্ষণ।
একদিন তোর মুখে সত‍্যি
        ফোটাবো হাসি ;
যেদিন নর পশু ধর্ষকের
   কণ্ঠে ঝুলবে ফাঁসি।
অন‍্যায় অবিচার অধর্ম অকর্ম
   সব একদিন হবে শেষ ;
   যেদিন পবিত্র নারী শক্তি
       শাসন করবে দেশ।

Sunday, January 5, 2020




কৈলাশ থেকে মর্তে এলে।
           দিলীপ রায়।

তুমি কৈলাস থেকে মর্তে এলে
গরীবের দুঃখ ঘোঁচাবে বলে।
হীরের গয়না আর সোনায় মুড়ে
গরীবের কথা গেলে ভুলে।
আলো ঝলমল প্যান্ডেলেতে
 তুমি ঠায় দাঁড়িয়ে দিনে রাতে।
তোমার সামনে অনাথ শিশু
উদাম গায়ে পথের ধারে।
ভিড়ের মাঝে দূরের থেকেই
তোমার ও রূপ দারিয়ে দেখে।
ফিরেও তুমি দেখলে না মা
একটিবারও তাদের পানে।
তোমার কৃপা পায়না তারা
থাকে যারা অনাহারে।
গরীবের ঘরে আসো না তুমি
আসো তুমি ধোনীর দ্বারে।
অসুর নাসীতে ধরায় এসে
অসুরের পূজায় তুষ্ট হলে।
তুমি অসুরের প্রতি সদয় হলে
গরিবের কথা ভুলেই গেলে।

Saturday, January 4, 2020





ধর্মাবতার
------------------ সুজন মন্ডল ।

ধর্মাবতা'র, আমি খুন করেছি,
নিজে'র ভেতরে থাকা :
মানবীয় সত্তা'কে—

লোভ'কে অমৃতে'র মত করেছি পান!
দেখিয়েছি যত্রতত্র ক্ষমতা'র গর্জন,
হিংসা'কে অস্ত্রে'র মত ব্যবহারে—

তারপর,
নিভিয়ে দিয়েছি সভ্যতা'র হিতার্থে হওয়া,
যজ্ঞে'র বিশুদ্ধ আগুন :
মধ্যযুগে'র জমাট বাঁধা মেঘের বৃষ্টি'তে—

ধর্মাবতা'র, আমি খুন করেছি,
নিজের ভেতরে থাকা :
মানবীয় গুণাবলী'কে, দানবীয় প্রবৃত্তি'তে—

ধর্মাবতা'র, আমি খুন করেছি,
দিয়েছি প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি!
এবার তাহলে শাস্তি হিসেবে ঝুলিয়ে দিন :
মানুষ হওয়া'র সংগ্ৰামে—

----------------------------------------------------------
সুজন মন্ডল খিদিরপুর বুনিয়াদপুর
দক্ষিণ দিনাজপুর পশ্চিমবঙ্গ

Friday, January 3, 2020

পঞ্চমুখ বাণলিঙ্গ

জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য মা মাটিয়া কালী ও পঞ্চমুন্ডি বাণলিঙ্গ

শুভঙ্কর রায়


দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমন্ডি ব্লকের আমিনপুর গ্রামের মাটিয়া কালী পূজা ৩০০ বছরেরও পুরনো। দিনাজপুর রাজ প্রানো নাথ রায়ের সমকালীন ছিলেন রাজা রাঘবেন্দ্র রায়। দিল্লি বাদশা সম্রাট ঔরঙ্গজেব এর কাছ থেকে চৌধুরী উপাধি লাভ করেন মোগল আনুগত্যের জন্য। হরিপুর ইস্টেটের বড় তরফ জমিদার রাঘবেন্দ্র রায়চৌধুরী সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে মা মাটিয়া কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে পূজা শুরু করেন। আমিনপুরে ছিল জমিদারের কাছারিবাড়ি।এই কাছারিবাড়ির মধ্যবর্তী স্থানে পঞ্চ বৃক্ষের নীচে পূজা হয় মা মাটিয়া কালীর। কোন মন্দির নেই। সমতল ভূমি থেকে কুড়ি /কুড়ি হাত বর্গক্ষেত্রের একহাত উচ্চ বেদীর উপর তিন হাত উচ্চ বেদি ই  মায়ের থান। মায়ের নির্দেশেই কোন মন্দির নির্মাণ হয়নি। সম্পূর্ণ মণ্ডপটি মাটি দিয়ে তৈরি। শোনা যায় যে রাঘবেন্দ্র রায়চৌধুরীর বংশধর রবীন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী আসনের উপর পাকা মন্দির নির্মাণের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু তিনি স্বপ্নাদেশ পান ওই স্থানে পাকা মন্দির বা ঘর নির্মাণ করলে তিনি সবংশে নিধন হবেন। এজন্য উৎসবের স্থানে কোনো ঘর বা মন্দির নির্মাণ হয়নি।  পূজোর সময় প্রতিমার উপরে চাদোয়া বা কাপড় টাঙিয়ে দেওয়া হয়।  শুধু পাকা মন্দির বা ঘর নয় । মাটি ছাড়া অন্য কোন প্রকার জিনিসের ব্যবহারও বোধহয় নিষিদ্ধ ছিল । কারণ শোনা যায় বেদির চারপাশের ১০/১২ বিঘা জমির মধ্যে কোন রকম কাঠের আসনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল।  জমিদারের কাছারিবাড়ির ঘরেও কাঠের আসনে বসতে বা শুতে পারতো না । এমনকি জমিদার স্বয়ং কাছারিবাড়িতে এলে তিনিও কাঠের উপরে বসতে বা শুতে পারতেন না।  কারণ একবার জোর করে উক্ত সীমানার মধ্যে কাঠের উপরে বসতে গিয়ে জমিদার দৈব শক্তির প্রভাবে ভূপতিত হয়েছিলেন।

মা এতটাই জাগ্রত যে আশেপাশের কেউ খাট বা চেয়ারে বসতে বা শুতে পারতেন না।  সে সময় সকলেই মাটিতে ঘুমোতেন সেই নিয়ম মেনে আজও শুধুমাত্র পুজার দিন গ্রামের সকলেই মাটিতে ঘুমান।



মায়ের পূজা শুরু সম্বন্ধে অন্য একটি কিংবদন্তী আছে মাটিয়া কালীর বেদি মন্ডপ যে স্থানে অবস্থিত, সেই স্থানে বহু পূর্বে জনৈক সিদ্ধপুরুষ এর পঞ্চমুন্ডির আসন ছিল এবং তিনি সেই স্থানেই সিদ্ধিলাভ করেন । জমিদার রাঘবেন্দ্র রায় কে প্রতি কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে ঐ স্থানে পূজা দেওয়ার জন্য তিনি স্বপ্নাদেশ করেন ।  সেই থেকেই ঐ স্থানে অমাবস্যা তিথিতে মহাসমারোহে মায়ের পুজা হয়ে আসছে।

পূজা শুরুর দুটো ভিন্নমত থাকলেও স্বপ্নাদেশে জমিদার পুজার প্রচলন করেন তার মিল রয়েছে । স্বপ্নাদেশে প্রচলিত পুজা সেই থেকে প্রতি দীপাবলি অমাবস্যা তিথিতে মা মাটিয়া কা লীর বার্ষিকী পুজা হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধেও দীপাবলি অমাবস্যায় ও রটন্তী চতুর্দশীতে মায়ের পুজা হতো । বর্তমানে রটন্তী চতুর্দশীর পুজা বন্ধ হয়ে গেছে । যদিও এতে মূর্তিপুজা হতো না । মূর্তিপুজা শুধু দীপাবলীর অমাবস্যা তিথিতে মায়ের পুজা হয়।  মায়ের প্রতি প্রবল ভক্তি শ্রদ্ধায় অগণিত ভক্তরা আসেন মায়ের পুজায়।  মনের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য মায়ের চরণে পাঠা নিবেদন করেন । দুইশতাধিক পাঠা বলি হয়।  জমিদারবাড়ির চার পাঁচটি পাঠা বলি দেওয়া হয় । পুজা শুরুর সময় থেকেই পাঠা ,পায়রা বলি দেওয়ার প্রচলন ছিল।

মায়ের মূর্তি গড়ার বিষয় নিয়ে অন্য একটি প্রথা আদিকাল থেকে প্রচলিত আছে।  মূর্তি গড়ার জন্য যে খড়ের প্রয়োজন হয় । তা আসে মুসলিম বাড়ি থেকে।  বংশ পরম্পরায় সেই বাড়ি থেকে খড় আসে।  এমনকি মূর্তি গড়ার কারিগর ,পূজোর পুরোহিত সকলেই বংশ পরম্পরায় পুজো করে আসছেন । মায়ের থানে পুরোহিতরা নিত্য পুজার প্রথা এখন আর নেই । এই পুজায় খড় দেওয়া মুসলিম পরিবার অংশগ্রহণ করে।

জমিদারের কাছারিবাড়িও এখন আর নেই।  ভেঙ্গে যাওয়ার পর টিনের ঘর ব্যবহারের জন্য করা হয়েছিল।  সেটিও এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে । জমিদারের বর্তমান প্রজন্ম বিজয়েন্দ্র নারায়ণ রায়চৌধুরী কর্মসূত্রে মালদা নিবাসী।  বার্ধক্যজনিত কারণে পুজার দায়িত্ব নিজের কাছে না রেখে গ্রামবাসীর হাতে তুলে দিয়েছেন । বার্ষিকী পুজার দিন সপরিবারে এসে সকলের সাথে পুজার আনন্দ ভাগ করে নেন।



পঞ্চমুন্ডি বাণলিঙ্গঃভারতবর্ষের মধ্যে বিরল শিবলিঙ্গ রয়েছে আমিনপুর গ্রামে । কালো  কষ্টিপাথরের পঞ্চমুন্ডি শিবলিঙ্গ।  শিব লিঙ্গের উপরে বৃত্তাকারে চারটি শিবের মুখ এবং এর উপর ভাগে একটি শিবের মুখ রয়েছে । এই কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গের দুই পাশে দুটি শ্বেত পাথরের শিবলিঙ্গ স্থাপন করা রয়েছে।  পঞ্চমুন্ডির আসন অর্থাৎ মা মাটিয়া কালির উপর মন্দির নির্মাণ ব্যর্থ হলেও অনতিদূরে জমিদারের কাছারিবাড়ির পুকুরধারে কষ্টি পাথরের শিবলিঙ্গ ও মন্দির স্থাপন করেন। এটি পঞ্চমুন্ডি বাণলিঙ্গ নামে পরিচিত।  ১২১১ বঙ্গাব্দে ৭ই জ্যৈষ্ঠ ভূপশ্রী গৌরী প্রসাদ কর্তৃক মন্দির এবং মূর্তি স্থাপন করা হয় । কালক্রমে মন্দিরটি ভগ্ন হলে জমিদারের পরবর্তী প্রজন্ম বিপ্লবেন্দ্র নারায়ন চৌধুরী কর্তৃক মন্দিরের পুনঃসংস্কার করা হয় ১৪০৯ বঙ্গাব্দে । ভগ্ন মন্দিরের কাঠামোকে কেন্দ্র করে নতুনের ঢালাই দেওয়া হয় । বাইরে থেকে দেখে সহজেই অনুমিত হয় মন্দিরটি নবনির্মিত।  মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ পথে পুরনো মন্দির এর ছাপ পরিলক্ষিত হয়।  শিবরাত্রি ছাড়াও শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার অসংখ্য ভক্ত এখানে আসেন পুজো দিতে।  মন্দিরটি তত্ত্বাবধানে রয়েছেন স্থানীয় বিশু সিং।



দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রতিটি অঞ্চলে এমন অগণিত প্রাচীন মন্দির স্থাপত্য রয়েছে।  কোনোটা আংশিক সচ্ছল বা কোনটা সংস্কারের অভাবে ধ্বংসপ্রায় । সঠিক তত্ত্বাবধানে প্রাচীন স্থাপত্য গুলো সংরক্ষন করে রাখা সম্ভব।  নইলে অদূর ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ঐতিহাসিক নিদর্শন।





আজকাল
 সুজন মন্ডল
----------------------------×××-----------------------------

আজকাল কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতারা,
মৌ'হারানো মাছির মতোন ঘুরে বেড়াচ্ছে!
গ্ৰামে গঞ্জে শহরের আনাচে কানাচে—
মালিবিহীন নরম নরম ফুলের খোঁজে :
লুটে নিতে তাদের পরিশ্রমী সঞ্চিত মধু ।
.
আজকাল কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতারা,
মানুষের শরীরে সুচের মতোন ফুটিয়ে যাচ্ছে মিষ্টিকথা ।
তারপর লাঙলের ফালে চিড়ে দিচ্ছে একেকটা হৃদয়—

 ---------------------------------××××--------------------------------
সুজন মন্ডল খিদিরপুর বুনিয়াদপুর
দক্ষিণ দিনাজপুর পশ্চিমবঙ্গ
17/09/2019.......

Thursday, January 2, 2020




আলাপন সাহিত্য পত্রিকা র
ওয়েব সাইট এ সকলকে স্বাগত।
কবিতা, ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ পাঠাতে যোগাযোগ করুন
আলাপন সাহিত্য পত্রিকা
সম্পাদক: শুভঙ্কর রায়
পো:কর দহ, থানা: তপন
জেলা: দক্ষিণ দিনাজপুর।
সূচক-৭৩৩১৪২
কথা:৯৭৩৫০৬৯৫৯৪/৯৮৩১৮৩৯৫৫৮
WhatsApp -9735069594
Mail id--alapanlittlemag@gmail.com

দিনাজপুর জেলার ইতিহাস অনুসন্ধান দ্বিতীয় খণ্ড

দিনাজপুর জেলার ইতিহাস অনুসন্ধান ( দ্বিতীয় খণ্ড ) দিনাজপুর জেলার ইতিহাস অনুসন্ধান দ্বিতীয় খন্ড  প্রকাশক : চক্রবর্তী এন্ড সন্স পাবলিকেশন  সম...