পৌষ পার্বণঃ স্মৃতির আঙিনায়-
কলমে- অনুপ
পৌষ মাস শষ্য শ্যামল কৃষি প্রধান বাঙলা ও বাঙালির সুখ-সমৃদ্ধির মাস। অগ্রহায়ণে শুরু হয়ে ধারানুক্রমে পৌষে সমাপ্ত হয় অন্নপ্রান বাঙালির শষ্যোৎসবের।একই সঙ্গে ইতি টানে সাধারণ মতে সূর্যের দক্ষিণায়ন পর্ব।
কৃষকেরা বিগত দিনগুলিতে ফসল গোলায় তোলার পর ঘর-দোর নিকানো, ধান সিজানো, ভাপান, আতপ ও উষ্ণ দুই ধরনের চাল করা...।উষ্ণ চাল আবার দু ধরনের -মুড়ির জন্য,আর ভাতের।এরপর ঢেকি পাড়,কুলোয় পাছড়িয়ে খুদ(চালের গুঁড়ো) কুড়ো(ধানের খোসার গুঁড়ো) বের করা, চিড়ে করা,মুড়ি ভাজা, সর্বোপরি জাঁতায় পিষে পিঠের চালগুঁড়ো করা;আরও কতশত খুটিনাটি কাজ।
এসবের অলক্ষ্যে রয়েছে এক উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি-পিঠে,পুলি,পায়েস খেয়ে ও খাইয়ে আতিথেয়তার পাশাপাশি ফসলের দেবীর 'ব্রত' আরাধনা।যাতে সংসারের অভাব দারিদ্রতা দূরীভূত হয়,ঘর-কন্না হাসি খুশিতে সম্বৎসর পূর্ণ থাকে,আগামীর শুভ কাজে কোনো বাধা বিঘ্ন না আসে। বেশিরভাগ গৃহের আরাধনা সংক্রান্তির আগের দিন।
একটি কাঠের জলচৌকি বা পিড়ি বা কাঠের সিংহাসন।তার উপর নতুন ধান দিয়ে চূড়া করা।সেই চূড়ার উপর একটি ধনভর্তি কাঠা।তাতে দূর্বা ও ইঁদুরের মাটি।কাঠাতে সিঁদুরের সিঁথি টানা।সমগ্রটি একখন্ড নতুন বস্ত্র দিয়ে ঘোমটাকৃতির নববধূর আদলে সাজানো।স্থানীয় ছদ(রীতিনীতি) অনুযায়ী দিন ও পদ্ধতি সামান্য ভিন্ন হতে পারে।আটনের সামনের দুই পাশে দুটি পেঁচা।এর মাঝ বরাবর কাঠের সিঁদুর কৌট,কাঠের চিরুনি,দর্পন,শাঁখা,পলা ও কড়ি।মুখ্য সামনের জলপূর্ণ আম্র পল্লবের ঘট।
কৃষির অনুষঙ্গাদি-খড়ানি ও বর্ষার লাঙল,মই,কোদাল,টাঙনা(লম্বা ডান্ডাযুক্ত সরু মোটা কোদাল,যা মাটির বড়ো চাঙড় তুলতে লাগত),ফাওড়া(লম্বা ডান্ডাযুক্ত বড় কোদাল) দা,কেদে(কাস্তে),দুনি,ধুমুস(কাঠের বৃহৎ হাতুড়ি) ,কুলা,ডালা,ধামা,ঢেকি,টুঙি,জাঁতা সবের গায়ে ভেজা চালগুঁড়োর থোপ।সাধ্যমতো যাবতীয় ফল, পুষ্প ও গৃহে নতুন ধানের চালে প্রস্তুত রকমারি পিঠা, পায়েস,সুবাসিত গোবিন্দভোগ চালের অন্ন ভোগ পঞ্চ ব্যঞ্জনে সাজিয়ে উৎসর্গ । মহিলারা ছালের কাপড়ে(পট্টবস্ত্র) গলবস্ত্র হয়ে ব্রত কথা ও পাঁচালি পাঠ করেন।আর্যীকরণের রীত্যানুসারে যজমানি প্রথার প্রচলন হলেও কুলীন ব্রাহ্মণরা অন্তজদের গৃহের কোন সংস্কার ও মাঙ্গলিক রীতি থেকে দূরে থাকত।
স্মর্তব্য যে সকল ব্রতের প্রধান উদ্দিষ্ট বস্তু -ঐ জলপূর্ণ ঘট,যা গর্ভধারনের প্রতীকি ব্যাঞ্জনা।আর সিঁদুর বা সিঁদুরের কৌট প্রসঙ্গে যতটুকু জেনেছি তা হলো,এটি রাঢ় অর্থাৎ লাল মাটির উর্বরতা শক্তির প্রতীক।সংস্কৃতে একে বঙ্গজ বলা হয়েছে।সিঁথি শব্দটি 'কোল' ভাষা গোষ্ঠী জাত।রাঢ় অঞ্চলের লাল মৃত্তিকায় কৃষি সভ্যতার ঊষালগ্নে মাতা ধরনীর কর্ষিত ভূমির শষ্য দান ও উর্বরতার কথা হয়তো মানুষের ভাবনায় ঠাঁই পেয়ে নারী ধরনী মাতার ন্যায় সর্বংসহা ও উর্বরতার দ্যোতক হয়ে উঠেছেন।
এই সকল প্রতীকী ব্যঞ্জনা প্রাধান্যকারী সংস্কৃতির উপর স্তরে হলে তাঁর দার্শনিকতা নিয়ে অহরহ প্রচার ও আলোচনা হতো-হওয়ায় স্বাভাবিক ;কিন্তু তা যখন সামাজিক স্তরের চির অবহেলিত মানুষের প্রাক ঐতিহাসিক স্তরের নির্মান তখন তা আমাদের ভাবনায় তুচ্ছ,গেঁয়ো ব্যাপার -তাই ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। উপর মহলের যে সংস্কৃতিতে আমি লালিত হচ্ছি সেখানে বর্ণাক্রমানুযায়ী কর্ম নির্দিষ্ট হওয়ায় তা পরিত্যাজ্য। অথচ তা ঐতিহ্য সূত্রে আমারই মাটির ! আবহমান কাল থেকে আমার বিকাশ ও প্রকাশের স্তরে জায়মান থেকে আমাকে, আমার বাঙলাকে,এর সমাজ সংস্কৃতি,সভ্যতাকে আর সবার থেকে অবশ্যই ভিন্ন মাত্রা দান করেছে।
এইভাবে অপরাপর কৃষি বিজড়িত উপাচারগুলিও সেই সব মানুষদের ভাবনায় জুড়ে বসে।যেমন আলপনায় লক্ষীর পদ চিহ্নের সঙ্গে লতাপাতার ব্যবহার বংশলতিকার দ্যোতক।গবেষকরা কৃষি ভিত্তিক সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া নকসা ও খোদিত চিত্রের সঙ্গে এই পদ চিহ্নের সাদৃশ লক্ষ্য করেছেন।আর সেখানে খননে চিরুনি,দর্পন তো মেলেই। যে দৃষ্টিকোন থেকেই দেখি না কেন, আমাদের বঙ্গের এই কৃষি ভিত্তিক প্রাকার্য ঐতিহ্য ও চেতনা কত প্রাচীন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে কি?
অতঃপর শষ্যের দেবী লক্ষীর 'ব্রত' উৎযাপন প্রসঙ্গ।সুধী পাঠক এই প্রাক বৈদিক সমাজের শষ্যের দেবী লক্ষীর সঙ্গে বৈদিক লক্ষী কে গুলিয়ে ফেলবেন না,আশারাখি। যতটুকু জেনেছি বাঙালি হিন্দুরা কোল গোষ্ঠী ও দ্রাবিড়দের থেকে আগত এই ধরনের অপরাপর ব্রতগুলি পালন করত বলে প্রাথমিক স্তরে তারা বৈদিকদের কাছে ব্রাত্য ছিলেন।একটি ব্রাহ্মণ গ্রন্থে,ব্রতধারীদের বেদদ্রোহী প্রাচ্য বলা হয়েছে।অথচ প্রাক বৈদিক এই লোকাচারের উদ্দেশ্য উৎপাদন বৃদ্ধি-ক্ষেতে ও সংসারে,একই অর্থে প্রতিপালন এবং পরম্পরা রক্ষার্থে পূর্বপুরুষকে স্মরন করা।সভ্য মানুষের কাছে এই ধরনের পরম্পরাগুলি চলে আসছে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম চেতনা জাগ্রত হওয়ার বহু পূর্ব থেকেই।সূচনার সেই পর্বে যখন সমাজ ছিল মাতৃ তান্ত্রিক এবং মানুষ অলৌকিকত্বে বিশ্বাসী।যার ঐতিহ্যের ধারা আজও বহমান। এই মাতৃকারূপী আরাধনার আদি উৎস ভারতবর্ষ সহ বিশ্বের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলি।পরবর্তীতে হিন্দু ধর্ম ও মহাজানী বৌদ্ধ ধর্মে এর প্রভাব পড়ে।অবশিষ্ট অন্যান্য প্রাধান্যকারী আরো পরবর্তীকালের ধর্মমত গুলিতে তা পরিহার করা হয়েছে।
এক্ষণে সম্মানীয় পাঠক স্মরণ করুন সিদ্ধাচার্যদের (চুরাশি জন) জীবন কথা;যাদের অধিকাংশ সামাজিক স্তরের সাধারণ শ্রেণির এমনকি এক-চতুর্থাংশ শুদ্র।বাঙলার অধিকাংশ গ্রামই যেন এই সকল কর্মমুখী দার্শনিকদের আবাস ভূমির ক্ষুদ্র সংস্করণ!বাঙলার জনমানসে তাদের কর্মমুখীন ভাবাদর্শের প্রভাব ছিল প্রবল।কৈবর্ত্য বিদ্রোহ দমনের পর পাল রাজারা প্রজাদের বশে রাখতে একই সঙ্গে মহাজানী ধর্মমত ও ব্রাহ্মণ্যবাদ উভয়েরই পৃষ্ঠপোষকতা করেন।মনে হয় ধর্ম সংঘাত ও সমন্বয়ের এই পর্ব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।সেই সময় থেকেই লোকায়ত স্তরের আচারগুলিতে বৈদিক প্রভাব বাড়তে থাকে।
টান মাটির দেশ। পানীয় জল সাধারণ হাতকলে প্রায় উঠেই না।দু চারজনের বাড়িতে সিলিন্ডার কল।গরীব দুঃখী সহ নিম্ন বর্গীয়দের নাওয়া খাওয়া পুকুরের জলেই।তাদের পাড়া আলাদা,বসার জায়গা আলাদা,খাবারের পাত্র আলাদা।ফাল্গুন চৌত্র মাস থেকে পুকুরগুলি শুকাতে শুরু করে।নিদারুন দগ্ধ দিন।তবে জলের মিষ্টত্ব ও হজম শক্তি অপরিসীম হওয়ায় সবেরই স্বাদ তৃপ্তিকর।আর আছে গ্রাম্য রাজনীতি।কিছু লোকের সব ব্যাপারেই মোড়লিগিরি। লাঠির জোড়,জোত জমির তেজ,জাত-পাত-বর্ণের রাঙানো চোখ,নির্মম শোষন, আর নিরক্ষর কিন্তু অশিক্ষিত নয় মানুষগুলিকে একরকম অমানুষ ভাবা যেন স্বাভাবিক ছিল। এই সকল চির অবহেলিত নিম্ন বর্গের সাধারণ মানুষদের রয়েছে নিজস্ব সুস্থ সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ।বিভিন্ন লোকায়ত পার্বণে নাচ,গান, বাজনার মধ্য দিয়ে তার স্বতঃস্ফূর্ত নিদর্শন তুলে ধরত।আজও ভেবে পায় না তাদের এই অফুরান প্রান ও কায়া শক্তির উৎস কোথায়! আপন ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি বহমান নীরব প্রেম থেকেই কি এই নিরবধিকাল টিকে থাকার সঞ্জীবনী সুধা আহরণ?
আসুন আপনাদের এমন একটি খেলার কথা শোনায় যা একদিকে অবাক করা অপরদিকে মেনে নেওয়া দায়-'পিঠে লড়ায়'।এই অঞ্চলের পিঠে একটু মোটা দাগের।বেশিরভাগই চালগুঁড়ো দিয়ে প্রস্তুত এবং ঝোলা আখের গুড় দিয়ে স্বাদ গ্রহন।আসকে,গড়া পিঠে,সিদ্ধ পিঠে,ভাজা পিঠে,পালো... ইত্যাদি।তবে সরাচোকালির স্বাদ আজও অমলিন।সংক্রান্তির দিন সকালে বাসি পিঠে খেয়ে লাঠি,গুলতি,ছিটকাল, নাহয় খলি হাতে মানুষ চলল গ্রামের বাইরে মাঠে অপর গ্রামের মানুষের সঙ্গে লড়ায় করতে! কখনো সখনো পরিস্থিতি ও চোট আঘাত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত।বিগত কয়েকদিন ধরে গ্রামের রাখালরা বিকালে মাঠে গবাদিপশু চরাতে গিয়ে পরস্পরের উদ্দেশ্যে টিকা টিপ্পনি ছোড়াছুড়ি করে এদিনে লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখত।অংশগ্রহনে সমাজের দূর্বলতম নিম্ন বর্গের সংখ্যাধিক্য থাকলেও উচ্চ ও মান্য বর্গের প্রতিনিধিরা অনেকেই অংশ নিত।মজার বিষয় সেই দ্বন্দ্ব স্রেফ সেদিনের, পরদিন থেকে গ্রামে গ্রামে আবার বনিবনা।তবুও খারাপ দৃষ্টান্ত।এখন বন্ধ হয়েছ বলেই জানি।হলেই ভাল।
প্রশ্ন এর পিছনে কোন কার্য-কারন সম্পর্ক বিদ্যমান ? এক,দীর্ঘদিনের অভুক্ত,অর্ধভুক্ত অধিকাংশ কৃষিজীবি মানুষই এই দুই মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের পাশাপাশি পেট ভরে দুবেলা দু মুঠো খেয়ে এখন হালকা ফুসরতে ধান কাটা মাঠে নতুন পিঠে খেয়ে আপন পিঠের সহন ক্ষমতা হয়তো মাপতে যায়।দু দিন পর আবার তো সেই একই চেনা লড়াই-দূর্দশার জীবনচক্র।দুই,আমার আলোচ্য এলাকার(সালার থেকে কাটোয়া মুখী রেলপথের গঙ্গাটিকুরি তক ডান দিকের বিস্তৃর্ন গ্রামাঞ্চল)২০ -৪০ কিমি, দূরে (কাটোয়া থেকে কীর্ণাহার)ফি বছর মারাঠা লুটেরাদের অর্থাৎ বর্গীর হামলার শিকার হতো গ্রাম বাঙলা।তারই প্রতিরোধ বাহিনীর অনুশীলন হিসাবে প্রাথমিক স্তরে হয়ত এর উৎপত্তি হয়েছিল সম্পদ ও সম্ভ্রম রক্ষার্থে।কেননা লড়াইয়ের মুখ দক্ষিণ, দক্ষিণ -পশ্চিম পানে, অন্য দিকগুলির মাঠে নয়।তিন,একটু বাড়াবাড়ি হলেও আপনাদের সাহস নিয়ে বলছি,প্রাচীন গঙ্গারিডির বাঙালির যে যোদ্ধৃরূপ যা আলেকজান্ডারের কাহিনী সূত্রে ঐতিহাসিকভাবে সত্য,এইটি তার কি কোন অবশেষ? চার,পাঁচালিতে বিনন্দ রাখালের প্রসঙ্গটির বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নে আমরা পাব পশুপালক সমাজে কৃষির দিকে পা বাড়ানোর প্রাথমিক স্তরে নিজেদের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কাহিনী।কষ্ট কল্পনা?
বেলাবেলি রাখালের দল ঘাসের মাঠে বৈকালিক ভ্রমন সেরে গবাদি পশুর পায়ের ধুলো উড়িয়ে যে সংক্রান্তির রাঙা গোধূলি আনে ধরিত্রীর বুকে তাতে ভর দিয়ে নেমে আসে পৌষের বিদায়ী সন্ধ্যা।উলু শঙ্খের দূরপ্রসারী ক্রমান্বিত ধ্বণিতে দিনের আলো আর রাতের আঁধারের সন্ধি নয়-যেন সমাস রচিত হচ্ছে চরাচর ব্যাপী।সাদা-কালোয় মিশ্রন তো নিত্য ঘটে চলেছে।কয়জনই বা দেখেছেন প্রকৃতি ও মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের- মিশ্রন নয় এমন মিলন! তারপর ঠান্ডায় জড় সড় সব বয়সের স্ত্রী লোকেদের দেখতাম মাঝ উঠানে আলপনা দেওয়া স্থানটিতে একটি পিড়ি মতন রেখে তার উপর ছোট ছোট গোবরের বড়ি করে পাশে চাল গুঁড়ো ছিটিয়ে পৌষ আগলিয়ে গান করছেন-এসো পৌষ,বসো পৌষ.....। কত ফ্যালফেলিয়ে দেখেছি অর্থ বুঝিনি।আজও না।সভ্যভার বিকাশের ঊষালগ্নে নারী জাতিকে কেন্দ্র করে যার অর্থপূর্ণ বিকাশ, উত্তরোত্তর বিকাশের পর্বে সম্পদের অধিকারে ও বর্ণের বিভাজনে, সংগঠিত ধর্মের শক্ত বাঁধনে সেই নারীই আজ সর্বস্তরে চূড়ান্ত অবমানিত। একইভাবে নিদারুণ শোষন বঞ্চনার শিকার এদেশের আদি সংস্কৃতির উদগাতা ও রক্ষাকর্তা কৃষক সমাজ।তবুও অজ্ঞাতসারে তারা তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা বুকে পাথর চাপা দিয়ে পালন করে চলেছে।
এর স্বরূপ 'ব্রত' পালনের মধ্যে নিহিত।ব্রতর উদ্দেশ্য 'আমার আরো চায়, আমাকে আরো দাও'।তবে তা প্রকৃতির কাছে প্রার্থনা রূপে -সর্বজনীনতাময়।আর এখন আমাদের এই সময়ের ব্যক্তি সর্বস্ব কালের ব্রত-আমারই চায়, আমাকেই দাও।কার কাছে? গণ শক্তির দ্বারা পুষ্ট আইনানুগ ক্ষমতাধারীর কাছে।নৈতিক বা অনৈতিক যে ভাবে হোক পেতেই হবে।কাউকে আহত করতে নয়,আবার সকলেই যে এমন তা ও নহেন।যা দেখছি কম বেশি সর্বত্র তা ই বললাম।অথচ এদেশের প্রকৃত কৃষিজীবি মানুষ নিজেদের খুব সাধারণ অবস্থায় কোনক্রমে যুগের পর যুগ শুধু টিকিয়ে রেখেছে তাই না,অন্তত ২৫০০-৩৫০০ বছরের কৃষি ও সংস্কৃতি পরিবর্তীত রূপে,যুগ, কাল ও ধর্মের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ধরে রেখেছেন।
আর পাঁচ জনের মতো এদের কেন ক্ষোভ,দুঃখ,যন্ত্রনা ও ক্ষুধার অনুভূতির তীব্র বহিঃপ্রকাশ তেমন নেই? স্বভাবধর্ম? কথার উৎস নিহিত বাংলা ভাষা যাদের সৃষ্ট সেই সিদ্ধ আচার্য সহজিয়াদের ( অস্ট্রাল জাতি গোষ্ঠীর) রচনা /পদ এ রাষ্ট্র/শাসক ও ধনীদের বিরুদ্ধে কোনো বিষোদগার পাবেন না।মিলবে আদিম স্বতঃফূর্ত মানবীয় দর্শণস্নিগ্ধ আপন জীবনচর্যা।উত্তরসূরি রূপে যদি বা ছিল উচু তলার লোকেরা নিজেদের স্বার্থে বার বার ব্যবহার করে সেটুকুও নষ্ট করে দিয়েছে।কেন না দারিদ্রতা নিয়েই ভাবনা যাদের সেই উচ্চকোটির কৃষক দরদীরা সাধারণভাবে এদেশের কৃষিজীবি সমাজের উন্নত মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সুস্থ সংস্কৃতি থেকে দূরে অবস্থান করেন।কৃষকের দর্শণ বাদ দিয়ে তাকে কাছে টানা যাবে?তাই এরাও দূরে। নতুবা নিচুতলার মানুষদের খিদের দাবিই হতো দেশের ও দশের মুখ্য দাবি।শুধুমাত্র এক ধরনের লোকায়ত আঙ্গিকের সঙ্গে জড়িত কৃষকেরা নন,আপামর কৃষক সমাজের দিকে তাকিয়েই এই মন্তব্য।আর আমরা শহুরে সুস্থ নাগরিক চেতনা সম্পন্ন মানুষেরা এক-দু পুরুষের মধ্যেই অনেকেই সব ভুলে যাচ্ছি!শুধু ভাবি পরিবর্তীত যুগে ও কালে প্রকৃতি ও মানুষের এই অচ্ছেদ্য সম্পর্ক যথাযথ মান্যতা পেলে ও রক্ষিত হলে আজ মানুষ এতখানি প্রকৃতি বিরুদ্ধ,কৃষক শোষনকারী,নারী বিদ্বেষী ও নিষ্ঠুর হতে পারত না।
★এই স্মৃতি আলেখ্যতে বিভিন্ন সময়ে পঠিত ইতিহাসবিদ ও লোক সংস্কৃতিবিদদের ভাবনার প্রভাব রয়েছে।