দেবহাটা জমিদার বাড়ি
দাতব্য চিকিৎসালয়, রাণী কুঠির, দেবহাটা মডেল স্কুল, ফুটবল মাঠ, রাস্তাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন তৎকালীন জমিদার, আধুনিক দেবহাটার স্থপতি ফনী ভূষণ মণ্ডল। একমাত্র জমিদার হিসেবে নানাবিধ কাজ করেছেন দেবহাটার উন্নয়নে। ফনী ভূষণ মণ্ডলের অবদানের কথা জানতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে হাজারও মানুষ। জানতে চায় এসব ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা।
প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর আবাসভূমি সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলা। সমগ্র দেবহাটায় একজন জমিদারের বসবাস ছিল। ১২ জন জমিদার বাস করতেন টাউন শ্রীপুরে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জমিদার ছিলেন ফনী ভূষণ মণ্ডল।
ফনী ভূষণ মণ্ডল ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে দেবহাটার সম্ভ্রান্ত গাতিদার (ছোট জমিদার) পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বিপেন বিহারী মণ্ডল ছিলেন একজন গাতিদার। মায়ের নাম ভুবন মোহিনী। জনশ্রুতি অনুযায়ী ফনী ভূষণ মণ্ডল অর্থ দিয়ে জমিদারী ক্রয় করেন। ব্রিটিশ শাসনামলের শেষ পর্যন্ত তিনি জমিদার হিসেবে দেবহাটার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে গেছেন।
দেবহাটায় শিক্ষা বিস্তারে ফনী ভূষণ মণ্ডলের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তিনি এলাকার মানুষের জন্য ১৯১৯ সালে নিজ জমির উপর বিপেন বিহারী মেমোরিয়াল পাবলিক ইনস্টিটিউট ও একটি ফুটবল মাঠ প্রতিষ্ঠিত করেন। স্কুলটি জাতীয়করণের পরে নাম রাখা হয় দেবহাটা বি.বি.এম.পি. ইনস্টিটিউশান (মডেল স্কুল)। কলকাতার বেনারস ইউনিভার্সিটি থেকে ফনী ভূষণ মণ্ডল স্থায়ীভাবে স্বীকৃতি (আজীবন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত) নিয়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন।
জমিদার হিসেবে ফনী ভূষণ মণ্ডল দেবহাটার মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য মায়ের নামে ১৯১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালে ভুবন মোহিনী ভিক্টোরিয়া চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি মানুষের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ভুবন মোহিনী ভিক্টোরিয়া চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি দেবহাটায় প্রথম চিকিৎসা কেন্দ্র। পরবর্তীতে এটি ব্যবহৃত হতো দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসেবে। বর্তমানে দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ।
এছাড়া জমিদার ফনী ভূষণ মণ্ডল বিনোদনের জন্য তৈরি করেন রাণী কুঠির। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালে এটি বাংলাদেশ পুলিশের থানা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সাতক্ষীরা জেলার সবচেয়ে প্রাচীন থানার মর্যাদা পায় দেবহাটার রাণী কুঠির। বর্তমানে সেই রাণী কুঠির আর নেই। কিন্তু রয়েছে দেবহাটা থানা। রাণী কুঠির ভেঙ্গে তৈরি করা হয়েছে থানা নতুন ভবন।
ফনী ভূষণ মন্ডলের অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। দেবহাটা ছিল জঙ্গলে ভরা। ওপারে ভারত, এপারে বাংলাদেশ। মাঝখানে ইছামতি নদী। ব্রিটিশ শাসনামলে খুব বড় মাপের জমিদার ছিলেন তিনি। দেবহাটায় তিনিই প্রথম তার মায়ের নামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। আরাম-আয়েশের জন্য রাণী কুঠির প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বর্তমানে থানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
দেবহাটা উপজেলার পুরো দেবহাটায় একজন জমিদারের বসবাস ছিল। টাউন শ্রীপুরে ছিল ১২ জন জমিদার। সব থেকে বড় জমিদার ছিলেন ফনী ভূষণ মণ্ডল। দেবহাটায় শিক্ষা বিস্তারে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। নিজ জমির উপর ১৯১৯ সালে দেবহাটায় তার বাবার নামে বিপেন বিহারী মেমোরিয়াল পাবলিক ইনস্টিটিউশান নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলটির জন্য তিনি কলকাতার বেনারস ইউনিভার্সিটি থেকে আজীবন স্বীকৃতি নিয়ে আসেন। এ কারণে স্কুলের নিবন্ধন প্রয়োজন হয়নি কখনো।
তৎকালে দেবহাটায় থানা করার জন্য দুই হাজার টাকার বাজেট দেয় ব্রিটিশ সরকার। পরবর্তীতে ফনী ভূষণ মণ্ডল রাণী কুঠির ও বিভিন্ন আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন দেবহাটা থানা। যা বর্তমানে এখনো পর্যন্ত বহাল আছে।”
সব মিলিয়ে ফনী ভূষণ মণ্ডল ব্রিটিশ শাসনামলে দেবাহাটার সার্বিক উন্নয়নের কারিগর হিসেবে কাজ করে গেছেন। তার এই উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা এখনো পর্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে দেবহাটার হাজারও মানুষ। দর্শনার্থীরা স্মৃতিচারণ করেন শ্রদ্ধাভরে।
No comments:
Post a Comment